অনুমতি ছাড়াই শেয়ার লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে বিনিময় সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে

অর্থনীতি , পুঁজিবাজার
বিশেষ প্রতিবেদন
0

অনুমতি না নিয়েই গ্রাহকের পোর্টফোলিও থেকে শেয়ার কেনাবেচা ও ঋণ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিনিময় সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে। দফায় দফায় শেয়ারের দাম কমতে থাকলে টাকা ফেরত চান গ্রাহক। এতে আবারো না জানিয়ে শেয়ার বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির শাখা পরিচালক। এতে একাধিক আইন লঙ্ঘনে কঠিন শাস্তির কথা জানায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। আর মন্দা বাজারে বিনিয়োগকারী বিমুখতা ঠেকাতে গ্রাহকের পুরো টাকা ফেরত দেয়া নিশ্চিত করার পরামর্শ বাজার বিশ্লেষকদের।

বিনিময় সিকিউরিটিজের পরিচিত মুহিব নামের একজন এজেন্টের মাধ্যমে শেয়ার ব্যবসায় যোগ হন দুই বন্ধু শফিক ও শাহাদাত। ২৬ ও ২১ লাখ টাকা বিনিয়োগের কিছুদিন পরেই সে এজেন্ট অনুমতি না নিয়েই শেয়ার ক্রয় করেন। এ নিয়ে জানতে চাইলে দেয়া হয় ভালো মুনাফার আশ্বাস।

ভুক্তভোগীদের একজন বলেন, ‘টাকা দেয়ার পরপরই তারা ইচ্ছে মতো কেনাকাটা শুরু করলো। তারা জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কেনা শুরু করলো কিছুদিন পর দেখলাম মার্জিন। তাকে বললাম ভাই হঠাৎ করে আপনি লোন নিয়ে আসলেন কেন আপনাকে তো লোন আনতে বলিনি।’

বিনিময় সিকিউরিটিজের এজেন্টের কেনা শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক কমতে থাকলে দুশ্চিন্তায় পড়েন শফিক ও শাহাদাত। লোকসান মেনে নিয়ে টাকা ফেরত চাইলে মুহিব পরিচয় করিয়ে দেন বিনিময় সিকিউরিটিজের সেনা কল্যাণ ভবনের শাখা পরিচালক মনিরের সাথে।

স্টক এক্সচেঞ্জের আইনে সিকিউরিটিজ হাউজের অনুমোদিত শাখা ছাড়া এজেন্ট নিয়োগ শাস্তিযোগ্য অপরোধ হলেও এর দায় স্বীকার করেন মনির। সেই সাথে বিনিয়োগকারীর অনুমতি ছাড়া আইন ভেঙ্গে অতিরিক্ত মার্জিন নিয়ে সেটার সুদ নিজেরাই পরিশোধ করেন মুহিব ও মনির।

তবে ডিসেম্বরের মধ্যে বিনিয়োগকারী দুজনকে টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয় তারা। এসময় না জানিয়ে কিছু শেয়ার বিক্রি করলে তা বন্ধে চিঠি দেয় শফিক। পরে সময়ক্ষেপণ করলে বিনিময় সিকিউরিটিজের প্রধান কার্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে শফিক ও শাহাদাত।

এ বিষয়ে মুহিব ও মনিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে উত্তর মেলেনি। তবে বিনিময় সিকিউরিটিজের এমডি বিষয়টি কারসাজি বলে দায় চাপান ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীদের উপর।

পরে বিএসইসি ও ডিএসইর দারস্থ হয় শফিক ও শাহাদাত। এখানে সময় বাড়িয়ে গড়িমসি করতে দেখা যায়। একসময় বাধ্য হয়ে শেয়ার বিক্রি করেন শফিক। তবে টাকা দিতে প্রত্যয়ন পত্রের জন্য বাধ্য করে বিনিময় সিকিউরিটিজ।

শফিক বলেন, ‘তারা এই সমস্যা সমাধানের কথা বলে থাকলেও তারা আমাকে সেই সমস্যা সমাধান করেনি এখনো।’

আইন ভেঙ্গে এজেন্ট নিয়োগ, মার্জিন ঋণ নেয়া ও নিয়মবহির্ভূত শেয়ার লেনদেনে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে বলে জানায় বিএসইসি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এক্সচেঞ্জের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আচরণের কারণে যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে সেটা যদি প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ক্লায়েন্ট যাতে টাকা ফেরত পায় সে ব্যবস্থা করা হবে।’

অপরদিকে পুঁজিবাজার ভালো রাখতে শুধু শাস্তি বা জরিমানা নয় বিনিয়োগকারীর অর্থ ফেরত পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ মো. আল আমিন বলেন, ‘এই ধরনের কেস অনুসন্ধান করে যদি প্রমাণ হয় যে গ্রাহক সত্যিকার অর্থে প্রতারিত হয়েছে সেখানে আস্থা বৃদ্ধির লক্ষে গ্রাহকের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে পাশাপাশি দোষীদের জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে।’

দেশের পুঁজিবাজারে মাঝে মধ্যেই বিনিয়োগকারীকে এভাবে অর্থ হারাতে হয়। যা আস্থা সংকটের মধ্যে বিনিয়োগকারীকে এই মন্দা বাজারে বিমুখ করে।

গত কয়েক বছরে ব্রোকারেজ ও সম্পদ ব্যবস্থাপকের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হারিয়েছে বিনিয়োগকারী। যা এখনো পুরোপুরি ফেরত পায়নি। বিনিয়োগ সুরক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা যে প্রতিজ্ঞা করেছে তা বিনিময় সিকিউরিটিজের ঘটনায় কতটা রক্ষা করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আর যদি বিনিয়োগকারী অর্থ ফেরত না পায় তবে এ শেয়ারবাজারে সুরক্ষার প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

ইএ