অর্থনীতি , তথ্য-প্রযুক্তি
দেশে এখন
0

অনুমোদনহীন মোবাইল বাজারে হারাচ্ছে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব

চাহিদার বিপরীতে শতভাগ উৎপাদন সক্ষমতা থাকার পরও দেশে অনুমোদনহীন মোবাইল সেটের বাজার বাড়ছে। এ কারণে বছরে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের কাছে অনুমোদনহীন মোবাইল সেট বন্ধের উপায় থাকলেও সে ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এতে করে মার খাচ্ছে সম্ভাবনাময় দেশীয় এ শিল্প।

চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এভাবেই বাক্সবন্দী হয়ে মোবাইল যন্ত্রাংশ আসে দেশে। পরে সেগুলো আলাদা রুমে ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়। মাদারবোর্ড থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সংরক্ষণ করা হয় স্মার্ট র‌্যাকের মাধ্যমে। বসানো হয় আইডেন্টিফিকেশন নম্বর। টাচস্ক্রিন, ক্যামেরাসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পরীক্ষা শেষে পাঠানো হয় অ্যাসেম্বেলিং রুমে।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মেশিনের মাধ্যমে পুরো মাদারবোর্ডের উপর লাগানো হয় আঠা। এরপর সেগুলো আরো কয়েকবার স্ক্যানিং ও ম্যানুয়ালি পরীক্ষা করা হয়। পরে মাদারবোর্ডের সঙ্গে ফোনের মূল কাঠামো সংযোজন করে পাঠানো হয় কারখানার আরেক কামরায়।

এখানে মাদারবোর্ডকে জোড়া দেয়া হয় ডিসপ্লের সঙ্গে। এর সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয় মাউথ পিস, স্পিকার, সিম কাভার, ক্যামেরাসহ ফোনের গুরুত্বপূর্ণ সব যন্ত্র। এরপর লাগানো হয় ব্যাটারি, রোবটিক যন্ত্রের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ও নিখুঁতভাবে লাগানো হয় প্রতিটি স্ক্রু।

ব্যাক কভার লাগানোর পর একটি মোবাইল সেটের প্রায় ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়ে যায়। পরে ফোনটিকে পাতলা পলিথিনে পেঁচিয়ে আরো একটি ব্যাক কভার পরিয়ে পরীক্ষা করা হয় সব যন্ত্র নিখুঁতভাবে লেগেছে কি না। এ অবস্থায় ফোনটিতে ইনস্টল করা হয় সফটওয়্যার। পরে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ করার জন্য বসানো হয় চার্জারের সঙ্গে।

ফোনে সিম প্রবেশ করিয়ে টেস্ট করা হয় ইন্টারনেট, কলিংসহ যাবতীয় অ্যাপ্লিকেশন, ওয়াই-ফাইয়ের সক্ষমতাও যাচাই করা হয় এ পর্যায়ে। পরে ফোনগুলোতে আইএমইআই স্টিকার লাগানোর পর প্রস্তুত হয় প্যাকেজিংয়ের জন্য।

পিটিসি. আপনার হাতে যে মুঠোফোনটি সেটা হয়তো হাজারেরও বেশি ধাপ পেরিয়ে আপনার হাতে উঠেছে। দেশে প্রায় ৫ কোটির বেশি স্মার্টফোন ব্যবহৃত হয়, এসব স্মার্টফোন উৎপাদন করে ১৭টি প্রতিষ্ঠান।

আর এ খাতের সঙ্গে জড়িত প্রায় ১৫ হাজারের বেশি কর্মী। কিন্তু এ বাজারে প্রায় ৪০ শতাংশ অবৈধ মার্কেটের প্রভাবে হুমকির মুখে পড়ছে এ শিল্প। তাই আনঅফিসিয়াল মুঠোফোনের প্রভাব কমাতে পারলে আগামী দিনে এ খাতে আরো কর্মী বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আনঅফিসিয়াল মোবাইল সেটের চাহিদা কতটা স্মার্টফোনের দোকানে গেলেই তার বোঝা যায়। ক্রেতাদের একটি বড় অংশ আগ্রহ নিয়ে কিনতে আসেন এসব ফোন। কারণ অফিসিয়াল ফোনের চেয়ে বেশ কিছুটা কমে পাওয়া যায় এসব মোবাইল সেট।

বিক্রেতারা বলছেন, যেহেতু চাহিদা রয়েছে তাই এসব মোবাইল সেট তারা বিক্রি করেন। বেশির ভাগ আনঅফিশিয়াল মোবাইলের সেটের দাম ৩০ হাজারের মধ্যেই।

প্রায় শতভাগ স্থানীয় কর্মী দিয়ে দেশেই মোবাইল সেট তৈরি করছে চীনের প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শাওমি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আগামীতে রপ্তানির লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু বিদেশ থেকে আসা আনঅফিসিয়াল মোবাইল সেটের দাপটে স্থানীয় উদ্যোক্তারা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এ বিষয়ে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মোবাইল সেট নির্মাতারা।

টেলিযোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের কাছে আনঅফিসিয়াল মোবাইল সেট বন্ধের উপায় থাকলেও তা প্রয়োগ করা হচ্ছে না। এতে করে এই শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে।

পরিসংখ্যান বলছে, আনঅফিসিয়াল মোবাইল সেটের কারণে বছরে প্রায় আড়াই থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

এএইচ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর