দেশে এখন
বিশেষ প্রতিবেদন
0

রাজধানীর সড়কে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা

রাজধানীর সড়কে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম এই অটোরিকশা নগরীর সড়ককে অকার্যকর করে তুলছে, সৃষ্টি করছে যানজট। সবমিলিয়ে লাইসেন্সবিহীন এসব অবৈধ বাহনের দাপটে অতিষ্ঠ নগরবাসী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত লাগাম টানা না গেলে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরো বাড়বে।

যেন মগের মুল্লুক। জেলা শহর বা মফস্বলও না এ চিত্র খোদ রাজধানীর। তাও আবার মূল সড়ক ছাপিয়ে দ্বোতলা সড়কে।

রাজধানীর রামপুরা ইউলুপে এভাবেই সকল নিয়ম কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে, ট্রাফিক পুলিশের সামনেই অনায়াসে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা।

শুধু রামপুরা নয়, গোটা রাজধানীজুড়েই এখন প্রধান সড়কগুলোতেও বাধাহীনভাবে চলছে রিকশা-অটোরিকশা, নেই লেনের বালাই আর গতিতেও বড্ড বেপরোয়া। আর এতে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা।

পথচারীদের একজন বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে পার হচ্ছি হুট করে একটা অটো সামনে দিয়ে চলে আসে। কিন্তু একটা পায়ে চালিত রিকশা হুট করে আসে না আর সামনে আসলে অতটা ডির্স্টাব মনে হয় না।’

পরিসংখ্যান বলছে, গেল একবছরে রাজধানীসহ সারাদেশের সড়কে তিনচাকার বাহনে দুর্ঘটনা ৯শ'র বেশি, সেখানে হতাহতের তালিকাও বেশ বড়।

জনবহুল ও যানজটের এই নগরে বৈধ যানবাহন সামলাতেই হিমশিম ট্রাফিক পুলিশের। সেখানে, অধিকাংশ সময়ে অদক্ষ চালকের এলোমেলো চলাচলে নগরীর সড়কগুলোতে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। এরমধ্যে অটোরিকশার দৌরাত্মে অতিষ্ঠ ট্রাফিক সদস্যরা।

ট্রাফিক পুলিশের একজন বলেন, ‘মেইন রাস্তায় অটোরিকশা আসার কারণে রাস্তার জ্যাম কিন্তু আগের থেকে বেড়ে যাচ্ছে। আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।’

বাস চালকদের একজন বলেন, ‘এরা ডান বাম লেন মানে না। আমরা যদি কিছু বলি তাহলে আমাদের হুমকি দেয়।’

বিগত সরকারের আমলে অটোরিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিলেও চাপের মুখে আদেশ প্রত্যাহার করে নেয় শেখ হাসিনা সরকার। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে মহানগরীতে অটো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন আদালত। অটো চালকদের তীব্র আন্দোলনে তাও কার্যকর হয়নি। এরপর আরও বেপোরোয়া অটো চালকরা।

অটোরিকশা চালকদের একজন বলেন, ‘মেইন রাস্তা আসলে ভাড়া বেশি পাওয়া যায়। গলিতে থাকলে তা হয় না।’

অভিযোগ আছে, তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় সড়কে জায়গা করে নেয় অটোরিকশা চালকরা। যদিও এখন তারা বলছেন, বেশি আয়ের জন্যই প্রধান সড়কগুলোতে উঠতে হচ্ছে তাদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটোরিকশা একেবারে বন্ধ না করে, দরকার সঠিক পরিকল্পনা। ধাপে ধাপে ও নির্দিষ্ট সড়কে চলাচল সীমিত করারও পরামর্শ তাদের।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘যদি কোথাও আমরা অ্যালাউ করি সেটা কোথায় ও কেন করবো, তার রেজিস্ট্রেশন কি হবে এই একটা পুরো পরিকল্পনা করা।’

নানা সীমাবদ্ধতার কারণে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না বলে দাবি করেন পুলিশের এই কর্তা। বলছেন, প্রয়োজনে অটোরিকশাকে বিআরটিয়ের নিয়মের অধীনে আনার পরামর্শ তার।

মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার দেওয়ান জালাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে তারা আইন মানতে চাই না। আর আইন সম্পর্কে অনেকে জানেও না। সবাই মিলে বসে একটা বাস্তব সিদ্ধান্তে আসলে আমার ধারণা এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।’

ঝুঁকিপ্রবণ বাহন বন্ধে বিভিন্ন সময়ে নানান উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, কিন্তু কার্যকর হয়নি কোন কিছুই। তাই নগরবাসীর চাওয়া, নিরাপত্তার জন্য হলেও অন্তত প্রধান সড়কে অটোবন্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেয়া হোক দ্রুতই।

ইএ