ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। আশ্রয় নেন ভারতে। এরপর থেকেই শুরু ঢাকা-দিল্লী সম্পর্কের টানাপড়েন।
তার উপর বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার, কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা, সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতের মিডিয়ার মিথ্যাচারে প্রতিবেশী দুদেশের সম্পর্ক তলানিতে।
এসব ঘটনায় কঠোর প্রতিবাদলিপি, ভারতের হাইকমিশনারকে জরুরি তলব, আগরতলার দূতাবাস বন্ধ, কলকাতায় ভিসা সীমিত করা ও সবশেষ দুই মিশন প্রধানকে দেশে ফিরিয়ে আনার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা।
প্রতিবেশী দেশ দুটির সম্পর্ক যখন সংকটে, ঠিক সেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেবার পর ঊর্ধ্বতন কোনও ভারতীয় কর্মকর্তার ঢাকায় এটিই প্রথম সফর।
এমন সংকটে বিক্রম মিশ্রির এই সফরকে ভারতের পক্ষ থেকে দুই দেশের সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠকের অধীনে স্বাভাবিক কূটনৈতিক কার্যক্রম হলেও সময় বিবেচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুল হক বলেন, ‘ভারত যে এই পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র সচিব পাঠাচ্ছেন এইটা হয়ত ভারতের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য মেসেজ। তারা হয়ত উপলব্ধি করতে পেরেছে বা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উৎসাহী।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. রুহুল আমিন বলেন, ‘ভারত আসছে তার দরকারে। ভারতের সাথে আমাদের যে বাণিজ্যের টানা পড়েন হচ্ছেন। ভারতের হাসপাতালগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হোটেল ব্যবসা বন্ধ হয়ে পড়ছে। এতে ভারতের প্রচণ্ড আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। জনগণ ভারতের সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে। তাদের এইসব ম্যানেজ করতে পররাষ্ট্র সচিব আসছে।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই শিক্ষক মনে করেন, ভারতের ব্যাপারে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এবার ৫ আগস্টের পরের দুদেশের সম্পর্কের যে মেরূকরণ হয়েছে তা ভারতকে বুঝতে হবে। তবেই সম্পর্কের উন্নতি হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুল হক বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ও অন্তর্বর্তী সরকার এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছে তা ঠিকই আছে আমি মনে করি। এটি একটি শক্ত অবস্থান এবং পরিষ্কার করেছে। গত ১৫ বছরের থেকে এটি একটি গুণগত পরিবর্তন হয়েছে।’
একই দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের মোট ২৮ জন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠককেও ভারতের জন্য বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. রুহুল আমিন বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা এই যে এই সময়ে আসছে এইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইটা বাংলাদেশের জন্য একটা মেসেজ সারা পৃথিবী বাংলাদেশকে একটা বড় রাষ্ট্র মনে করে। বাংলাদেশের পাশের রাষ্ট্র একটু থ্রেডের মধ্যে রাখছে তাই বাংলাদেশকে পাশে দাঁড়াতে তারা আসছে।
সবশেষ গেল বছরের নভেম্বরে ভারত বাংলাদেশের ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠকটি দিল্লীতে হয়েছিল।