নির্মাণাধীন বড় বড় ভবনের ছাদে চালানো হয় বাকেট মেশিন। কোনোরকম সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবহার ছাড়াই অনেক সময় কাজের স্বার্থে শ্রমিকদের যেতে হয় ছাদের শেষ প্রান্তে। এই মেশিন দিয়ে নিচ থেকে একসাথে অনেকগুলো ইট তোলা যায়। সেখানে থাকা শ্রমিক ভবনের বাইরে থেকে ইটগুলো ভেতরে নেন। তাদেরও থাকে না কোনো সুরক্ষা সামগ্রী।
বারোতলা ভবনের চিলেকোঠা নির্মাণ করার সময় সুউচ্চ এই ভবনের ছাদেও শ্রমিকদের সুরক্ষা সামগ্রীর কোনো বালাই নেই। দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকা শ্রমিকদের সাবধানে কাজ করতে বলেই দায় সারেন ভবন মালিক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
একজন শ্রমিক বলেন, 'সেফটি হিসেবে হেলমেট, বেল্ট কেউ দেয় না। আমরাই যদি বিদেশে যাই তাহলে সেখানে হেলমেট, বেল্ট সব দেয়। ওখানে সব দেয়ার পরও যদি কেউ না পড়ে তাহলে তাকে জরিমানা করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে তো দেয়ই না।'
বাকেট মেশিনের মাধ্যমে নিচে থেকে ছাদে ইট তোলা হচ্ছে। ছবি: এখন টিভি
একসাথে কাজ করতে গিয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে সহকর্মীর মৃত্যু দেখেছেন অনেকেই। তবুও পরিবারের খরচ যোগাতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় নিম্নআয়ের নির্মাণ শ্রমিকদের।
একজন শ্রমিক বলেন, 'অহরহ পড়ে গিয়ে মারা যাচ্ছে। আসলে আমরা তো শ্রমিক, গরীব মানুষ, পেটের দায়ে কাজে আসি আমরা। মারা গেলে তো করার কিছুই নেই। কেউ মারা গেলে তার পরিবারের দায়িত্ব কেউ নেয় না। কন্ট্রাকটরও নেয় না, মহাজনও নেয় না।'
বগুড়া জেলায় নিবন্ধিত অনিবন্ধিত সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ নির্মাণ শ্রমিক রয়েছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জেলার গৃহ নির্মাণ শ্রমিক পরিষদের নেতারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না কোনোভাবেই।
বগুড়া জেলা গৃহ নির্মাণ শ্রমিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হান্নান বলেন, 'আমরা মিটিং বা বিজ্ঞাপনে পত্রিকায় দেই যে সকল বহুতল ভবনে শ্রমিকের সেফটির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। অনেক ডেভেলপার নিচ্ছে আবার অনেকে নিচ্ছে না।'
শুধু নির্মাণ শ্রমিক নয় যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজেই শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের। বগুড়া শহরের প্রতিটি নির্মাণাধীন ভবনেই নজরে আসে ভবন মালিকদের উদাসীনতা। কোথাও কোনো সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবহার চোখে পড়ে না।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মো. মাসুদ রানা বলেন, 'ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রপার পিপি নিশ্চিত করেই শ্রমিককে কাজে নিয়োগ করতে পারবে। অন্যথায় যদি কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। সেক্ষেত্রে ঠিকাদারি সংস্থা এবং মালিক কর্তৃপক্ষের অবহেলা হিসেবেই চিহ্নিত হবে।'
নির্মাণাধীন ভবন মালিক কিংবা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলতে চাননি কেউই। দুর্ঘটনার দায়ভার চাপাচ্ছেন শ্রমিকের অসচেতনতার উপর। দেশের উন্নয়নকে দৃশ্যমান করতে যারা কাজ করছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, তারাই যখন প্রবাসে কাজ করছেন তখন পাচ্ছেন পূর্ণ নিরাপত্তা। এই মানুষগুলো প্রস্তুত যেকোনো পরিবেশে কাজ করতে। তাই তাদের দাবি নিরাপদ করা হোক তাদের কর্মস্থল।