চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা গেলো প্রায় আড়াই মাস যাবৎ। জুলাই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে ক্যাম্পাস চিরচেনা রূপ হারায়। ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে অংশ নিয়ে ক্লাস পরীক্ষা অঘোষিতভাবেই বন্ধ হয়। পরে ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়। এরপর ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করেন ভিসি, প্রো-ভিসি, প্রক্টরিয়াল বডি, হল প্রভোস্টসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের ব্যক্তিরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে শূন্যতা বিরাজ করায় স্থবির হয়ে পড়ে সমস্ত কার্যক্রম। এতে দীর্ঘ সেশন জটে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয় শিক্ষার্থীদের। এমন অবস্থায় দ্রুত ভিসি নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্যক্রম শুরুর দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। দফায় দফায় আন্দোলন, অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর কমপ্লিট শাট ডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। তালাবদ্ধ করে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক।
পরে দুপুরে প্রফেসর ড. ইয়াহহিয়া আখতারকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
নতুন উপাচার্য নিয়োগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের পরিবেশ স্বাভাবিক করার পাশাপাশি হলগুলো দ্রুত খুলে দেয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের। একইসাথে অন্যান্য প্রশাসনিক পদগুলোতেও নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কাজে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা তাদের।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'দীর্ঘ একটা সময় আন্দোলনের সময় আমরা আজকে যে প্রজ্ঞাপন পেয়েছি, তার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তার কাছে দাবি থাকবে তিনি আমাদের আরও সুন্দর ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস উপহার দেবে।'
নতুন উপাচার্যকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষকরাও। বিগত সময়ে শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মাচারি নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের বহু অভিযোগ উঠেছে৷ অভিযোগ ওঠে রাজনৈতিক বিবেচনায় দলীয় লোকদের শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মাচরী পদে নিয়োগেরও। এবার সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চান শিক্ষকরা।
চবি প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান বলেন, 'কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক সবার মধ্যে পেশাদারিত্ব ফিরবে। যার যার জায়গা থেকে সে পেশাদারি আচরণ করবে। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা আধুনিকমানের বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব।'
চবি উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শেখ বখতেয়ার হোসেন বলেন, 'অনেক বিষয়ে সংস্কার নিয়ে আসতে হবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা হয়ে গেছে, তা হলো শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে। শিক্ষক নিয়োগে আমি মনে করি আমূল পরিবর্তন করতে হবে। এই যে ২০ মিনিটের একটা ভাইভা দিয়ে একজনকে শিক্ষক হিসেবে নির্বাচন করা এখনকার সময়ে কোনো যুক্তিযুক্ত পদ্ধতি বলে আমি মনে করি না।'
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।