দেশে এখন
0

'ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কাজে লাগিয়ে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা চলছে'

গত ৫ আগস্ট সারা দেশের মতো বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়ে সিলেটের ছাত্রজনতা। বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে রাজনৈতিক দমন পীড়নের শিকার সাধারণ মানুষ। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের ঘটে বহিঃপ্রকাশ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হামলা হয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে। তবে, মসজিদ, মন্দিরসহ কোনো উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেনি।

তবুও সাম্প্রতিক অপ্রীতিকর ঘটনাগুলোকে ধর্মীয় মোড়কে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন সভা-সমাবেশ ও মিছিল থেকে বলা হচ্ছে সংখ্যালঘু নির্যাতন। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেটেও মাঠে নামেন সনাতন ধর্মের মানুষ।

শ্লোগানে বক্তৃতায় মন্দির-মণ্ডপে হামলারও অভিযোগ করেন তারা। তবে, সিলেটে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তাদের ধর্মীয় নেতারা।

সিলেটের নিম্বার্ক আশ্রমের ম্যানেজার যিশু চক্রবর্তী বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে কিছু আক্রমণ হয়েছে।’

সিলেটের ইসকন যুগল টিলার গৃহস্থ কাউন্সিলর ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সচিনানন্দ শ্যাম সুন্দর বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে সেটা আমাদের সনাতনীদের ইস্যু না। আমরা যারা সনাতনী আছি, এখন পর্যন্ত সিলেটে তাদের কোনো মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।’

সনাতন ধর্মের নেতারা বলছেন, সিলেট এখনও সম্প্রীতির শহর। সর্বজনীন মন্দিরে কেউ হামলা করেনি। উল্টো নিরাপত্তার স্বার্থে হিন্দু-মুসলিম এক হয়ে পাহারা বসিয়েছেন প্রত্যেকটি মন্দিরে। তারা বলছেন, ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির মতলববাজ আতঙ্ক তৈরি করে সাধারণ সনাতনীদের ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে।

নিম্বার্ক আশ্রমের সম্পাদক রনবীর চক্রবর্তী বলেন, ‘ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য অনেকেই এটাকে রাজনৈতিক প্রয়োজনে প্রয়োগ করছে।’

সনাতনী সম্মিলিত সমাজের উপদেষ্টা বলদেব কৃপা দাশ বলেন, ‘আমাদের পাশাপাশি মুসলিমরা এসে আমাদের সহযোগিতা করেছে।’

সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে প্রায় আড়াই হাজারের মতো মন্দির ও ধর্মীয় উপাসনালয় আছে। হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জেও কোনো মন্দির-মণ্ডপ বা আশ্রমে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বজায় আছে সম্প্রতির সমাজ- বলছেন, পণ্ডিত পুরোহিতরাও।

কুলাউড়ার দৌলতপুর নারায়ন মন্দিরের সেবায়েত শিবন দাস বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এখন পর্যন্ত এরকম কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমাদের এলাকার মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রদায় বজায় রেখে চলে।’

অন্যদিকে পৃথিমপাশার পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পূর্ণেন্দু দত্ত বিভন বলেন, ‘জামায়াতের নেতা এসেছিলেন। যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে তাকে জানানোর জন্য ফোন নাম্বার দিয়ে গেছেন। এখানে সব কিছু শান্ত আছে।’

হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের মসজিদ-মন্দিরেও স্বাভাবিকভাবেই চলছে ধর্মীয় আচার- ইবাদত। সংখ্যালঘুদের উপর কিংবা তাদের বাসাবাড়ি ও দোকানপাটেও তেমন কোনো হামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দরা।

সুনামগঞ্জের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘মুসলমান সম্প্রদায়ের ভাইরা এ ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট সাহায্য-সহযোগিতা করছে।’

সনাতন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দরা বলছেন, সিলেট অঞ্চল বরাবরই সম্প্রীতির অন্যতম উদাহরণ। রাষ্ট্রের সংকটকালীন সময়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ গঠনে সম্মিলিত চেষ্টাই হোক প্রধান লক্ষ্য। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষকে ষড়যন্ত্রের শিকার না হওয়ার পরামর্শও দেন তারা।

tech