ব্যস্ত প্লাটফর্মে ভর করেছে রাজ্যের নিস্তব্ধতা। রেললাইন দিয়ে ভেসে আসছে না ব্যস্ত চাকার ঝিকঝিক শব্দ। সময় এখানে মন্থর। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেজে উঠছেনা শহর ছাড়া ট্রেনেদের সাইরেন। নেই কুলিদের হাঁকডাক বা যাত্রীর কোলাহলও। দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই স্টেশনটি এখন এমনই বেকার, অলস বা কর্মহীন।
গেল ১১ দিনে এই স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো যাত্রী বা পণ্য পরিবহনের ট্রেন। অগ্রিম টিকিট কিনে এখন তা ফেরত নিতে আসছেন অনেকে। তবে অনলাইন সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় টাকা ফেরত না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন তারা।
পূর্বাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে সোনার বাংলা, চট্টলা এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনের অন্তত ৪০টি কোচে। হামলা হয়েছে তিনটি ট্রেনের ইঞ্জিনে। বাদ যায়নি রেললাইন ও রেলস্টেশনও।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত জি এম সুশীল কুমার হালদার জানান, 'অতি শীঘ্রই আমাদের রেল যোগাযোগ চালু হবে এমন নির্দেশনাই আসতে চলেছে।' এছাড়া প্রায় ৫০ কোটি টাকা সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। তাদের হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি অগ্রিম টিকেটের টাকা ফেরতে। তাছাড়া পূর্বাঞ্চলে দিনে যেখানে ৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয় সেখানে এই কদিনে ক্ষতি দাঁড়াচ্ছে ৩৩ কোটি টাকার মতো। যার সাথে আগুন ও ভাঙচুরের ৫ কোটি টাকার হিসাব ধরলে ক্ষতি দাঁড়ায় ৩৮ কোটি টাকা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন,'যাত্রীদের নিরাপত্তাকে আমরা প্রথম প্রাধান্য দেই। নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই আমরা যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করবো।'
ক্ষতির ক্ষতটা বেশি চোখে পড়ে স্টেশন ও রেলনির্ভর জীবিকা নির্বাহ করা এই নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে দেখলে। রেল চললে যারা ভালো থাকেন- তাদের এখন সবচেয়ে কঠিন সময়।
রেল চলাচল বন্ধ থাকায় স্টেশনে জমেছে পণ্যের স্তূপ। ব্যাহত হচ্ছে পণ্য পরিবহন। তবে চট্টগ্রামের দু'টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য তেলবাহী ওয়াগন যাচ্ছে বিজিবির বিশেষ নিরাপত্তায়।
বিজিবির সহকারী পরিচালক আজিমুল হক বলেন, 'চট্টগ্রাম থেকে হাটহাজারি এবং দোহাজারি এবং বদলা স্টেশন থেকে সিলেট, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টসহ রংপুর স্টেশনসহ বিভিন্ন রুটে তেলবাহী ওয়াগন নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে।'
রেলের পূর্বাঞ্চলের অধীন দৈনিক প্রায় ৫৭টি আন্তঃনগর রেল চলাচল করে থাকে। কবে নাগাদ এসব রেল চালু হবে তা নিয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাননি কর্মকর্তারা।