দেশে এখন
0

বিপুল বরাদ্দেও উপকূলে হয় না টেকসই বাঁধ

দেশের উপকূলে প্রায় প্রতিবছরই আঘাত হানে কোনো না কোনো ঘূর্ণিঝড়। বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ জনপদ। এরপর আসে অর্থের বরাদ্দ। শুধু খুলনার কয়রা ও সাতক্ষীরায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার স্থায়ী বাঁধ প্রকল্প থাকলেও তা চলছে কচ্ছপগতিতে। আর তাৎক্ষণিক বরাদ্দে বেশিরভাগ সময়ই বালু আর মানহীন ব্যাগ ফেলেই শেষ হয় কাজ। ঘূর্ণিঝড় মোকবিলায় কতটুকু প্রস্তুত সেসব বেড়িবাঁধ?

২০০৭ সালে সিডর, ২০০৯ সালে আইলা, ১৩ সালে মহাসেন এরপর প্রায় প্রতিবছর উপকূলীয় এলাকায় আছড়ে পড়ে ফণী, বুলবুল, আম্পান, সিত্রাং কিংবা মোখার মতো প্রলয়ংকারী সব ঘূর্ণিঝড়। যাতে প্লাবিত হয় উপকূল। তাই দূর্যোগ এলেই আতঙ্কে থাকেন স্থানীয়রা। যার প্রধান কারণ দুর্বল বেড়িবাঁধ। যদিও প্রতিবছরই বেড়িবাঁধ সংস্কারে আসে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ, চলে কাজ তবে ঝুঁকি কাটে না উপকূলবাসীর।

কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর তীরবর্তী এলাকা খুলনার কয়রা। ১৫৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ থাকার পরও প্রতিবার ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ উপজেলার মানুষ। যেখানে প্রতিবছরই বাঁধ সংস্কারে ৩ কোটি টাকা খরচ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় শুধু অর্থের অপচয় হয়।

তবে সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ উপজেলার প্রায় ৩২ কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যাতে দুই ধাপে খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। যার মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ শেষ।

টেকসই বাঁধ না হওয়াতে চরম ঝুঁকিতে নদী পাড়ের বাসিন্দারা। ছবি: এখন টিভি

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসরাফুল আলম বলেন, 'অধিক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে এবং মেরামত কাজ চলমান আছে।'

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম তারিক উজ জামান বলেন, 'বেরিবাঁধকে শক্ত করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে একটি মেগা প্রকল্প চলমান আছে। এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় রেমাল আসছে।'

এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ রেমালের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষের মাঝে। ঝড়ের চেয়ে বেশি আতঙ্ক নড়বড়ে বাঁধ নিয়ে। যদিও এখানে প্রতিবছর বাঁধ সংস্কার বাবদ খরচ হয় ১০ কোটি টাকা। তবে যে কাজ শেষ হয় বালু আর নিম্নমানের জিও ব্যাগ ফেলা আর রিং বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে। যাতে অর্থের অপচয় হলেও দুর্ভোগ শেষ হয় না উপকূলবাসীর।

তবে এবারে শুরু হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প। যার আওতায় নির্মাণ করা হবে ২৯ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ। ২০২৩ সালে শুরু হওয়া কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরও ৩ বছর। তবে এরপরেও ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে আরও ৩০ কিলোমিটার অংশ।

সিসি ব্লকের বদলে শুধু জিও ব্যাগ দিয়ে মুড়িয়ে রাখার চেষ্টা। ছবি: এখন টিভি

নদীবেষ্টিত ও সাগর উপকূলে অবস্থিত ভোলা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ জেলা হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে জেলায় ৩৩৪ কিলোমিটার বাঁধ থাকলেও স্থানীয় মাত্র ৪৭ কিলোমিটার। এরমধ্যে ৫৫ কিলোমিটার জিওব্যাগ ডাম্পিং করা। বাকি ২৮৭ কিলোমিটার বাঁধ পুরনো, সরু, নিচু ও অস্থায়ী ঝূঁকিপূর্ণ। তবে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় পুরো টেকসই বাঁধ নির্মাণ সম্ভব নয় বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ভোলা পাউবো'র নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, 'মেঘনার পাড়ে আমাদের যে বাঁধগুলো রয়েছে সেগুলো যথেষ্ট চড়া। তবে সব জায়গাতে সিসি ব্লক দিয়ে মোড়ানো নাই। তবে আমরা সাময়িকভাবে জিও ব্যাগ দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছি। যাতে ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করতে না পারে।'

লঘুচাপের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বরগুনার উপকূলীয় অঞ্চলে। বিরাজ করছে গুমোট আবহাওয়া। ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৯ কিলোমিটার অতি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ আতঙ্ক বাড়াচ্ছে স্থানীয়দের মাঝে। জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে রয়েছেন ভাঙ্গন প্রবণ নদী তীরের মানুষ।

এদিকে ভাঙ্গন তীব্র হয়েছে কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের এক কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। যাতে শঙ্কা বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া উপজেলার ৫১৮ দশমিক ৩ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে।

এরমধ্যে ৫ দশমিক সাত শূন্য কিলোমিটার ঝুঁকিতে আছে। এদিকে নোয়াখালীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে ১২০ কি.মি। তবে মেঘনার বুকে জেড়ে উঠা ৩০টি চরে নেই কোন বেড়িবাধ। যেখানে বসবাস লক্ষাধিক মানুষের।