দেশে এখন

চট্টগ্রামে উপেক্ষিত সড়ক নিরাপত্তা, কমেছে গাড়ির গতি

চট্টগ্রামে নতুন সড়ক বাড়লেও উপেক্ষিত থেকে গেছে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়। ক্ষতির পাশাপাশি বছরে মারা যাচ্ছে শতাধিক মানুষ। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায়, অতিরিক্ত গাড়ির কারণে যানবাহনের গড় গতি নেমেছে মাত্র ৫ কিলোমিটারে, যা এক যুগ আগেও ছিল ২১ কিলোমিটার।

১০ বছরে বন্দর নগরীর সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার পথ। বেড়েছে কানেকটিং রোড, জংশন, কালভার্ট কিংবা নতুন নতুন উড়ালসড়ক। আধুনিক ও স্মার্ট নগরের তকমা লাগাতে করা এই উন্নয়নের সুফল কতটুকু মিলছে নগরবাসীর? সড়ক নির্মাণ আর ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তার বিষয়টি কী ভাবছেন সবাই?

এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে এখন টেলিভিশন যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোডপেডিক ওয়ার্ডে। ধারণক্ষমতার তিন বা চারগুণ রোগীতে নাকাল এই ওয়ার্ড, মেঝেতে ঠাঁই হয়েছে দুর্ঘটনায় আহত বহু রোগীর।

একজন রোগী বলেন, 'আমি রাস্তা পার হওয়ার সময় সিএনজি এসে মেরে দিছে। এতে আমার হাত ভেঙেছে। মাথায় আঘাত লাগছে।'

নগরের সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি, পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের এক যৌথ জরিপ চালায়। এতে দেখা যায়, ২০২০ সাল থেকে ৩ বছরে নগরের সড়কে সড়ক দূর্ঘটনায় হতাহতের হার বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। ঝরেছে প্রায় ৩৫০ প্রাণ। নিহতদের মধ্যে ৮১ শতাংশই পুরুষ।

বিআইজিআরএসের সার্ভিল্যান্স কো-অর্ডিনেটর কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, 'অনেক অযান্ত্রি গাড়ি দেখা যায় হাইস্পিড গাড়ির সাথে চলাচল করছি। এই গতির তারতম্য হো্য়ার জন্য দুর্ঘটনা হয়ে থাকে।'

ধারাবাহিক এই গবেষণায় নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনের বেপরোয়া গতির বিষয়টিও আমলে নেয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার বেশী। সবচেয়ে বিপজ্জনক সড়ক বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক। যেখানে তিন বছরে প্রতি কিলোমিটারে পাঁচজন করে মারা গেছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বিপজ্জনক পয়েন্ট ধরা হয়েছে টাইগারপাস মোড় ও আউটার রিং রোডের খেজুর তলা, তিন বছরে সেখানকার ২৫০ মিটারের মধ্যে মারা গেছেন পাঁচজন। এজন্য সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থার ত্রুটিকেই এর জন্য দুষছেন বিশেষজ্ঞরা।

কাজী সাইফুন আরও বলেন, '৫৫ শতাংশ পথচারী ঝুকিঁপু ৩০ শতাংশ মোটরসাইকেল এবং ঝৃকিঁপূর্ণ।'

বিআইজিআরএসের ইনফোর্সমেন্ট কোর্ডিনেটর কাজী হেলাল উদ্দীন বলেন, '৮২ জন করে দুই দফায় পুলিশকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলো কন্ট্রোল করা সম্ভব।'

ট্রাফিক পুলিশের তথ্য বলছে, একযুগ আগে নগরীতে গাড়ির গড় গতি ছিল ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার এখন তা অর্ধেকে নেমেছে। বর্তমানে পাবলিক বাসের গড় গতি ঘন্টায় মাত্র ১০.৩ কিলোমিটার। জরিপে দেখা যায়, চট্টগ্রাম শহরে যাত্রীদের ৪৮ শতাংশই বাস ব্যবহার করে, সিএনজি অটোরিকশা ১৬ শতাংশ, ব্যক্তিগত গাড়ি ১৩ শতাংশ, টেম্পু ১২ শতাংশ ও হিউম্যান হলার ১০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক বাড়লেও, পাল্লা দিয়ে গাড়ির সংখ্যা বাড়ায় গতি কমছে।

চট্টগ্রাম ট্রাফিক উত্তরের উপ পুলিশ কমিশনার জয়নুল আবেদীন বলেন, 'মিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মার্কেট শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। একই জায়গায় যান্ত্রিক যানবাহন চলছে। আবার মানুষ পারাপার হচ্ছে।'

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর