দেশে এখন
0

পালিয়ে আসা ৩৩০ জনকে ফেরত নিলো মিয়ানমার

পালিয়ে আসা ৩৩০ জনকেই দুই দফায় ফেরত নিয়েছে মিয়ানমার। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কক্সবাজারের ইনানী জেটিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে তাদেরকে তুলে দেয় বিজিবি।

ভোর সাড়ে চারটায়ও কোলাহলমুখর ছিল বান্দরবানের ঘুমধুম ও টেকনাফের হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়। একটু পরেই দেশে ফেরার যাত্রা, তাই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলে মিয়ানমার নাগরিকদের।

স্কুলের আশপাশে আগে থেকে অবস্থান নেয়া ছিল বিজিবির বিপুল সংখ্যক সদস্য। যাচাইবাছাই শেষে একে একে সবাইকে নামিয়ে আনা হয়। তাদের মাঝে ২ নারী এবং ২ শিশুও আছে । প্রায় ১ সপ্তাহ পর দেশে ফিরতে পেরে খুশি হয়েছেন সবাই।

ভোর সাড়ে ৬টায় ভোরের আলো ফোটার আগেই পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল। এরমধ্যেই মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তায় বাসে তোলা হয়।

সারিবদ্ধ ৬টি বাসে তাদের তোলা হয়। প্রত্যেকটি গাড়ির সামনে, পেছনে ও সড়কে কড়া পাহারায় ছিল বিজিবি। প্রায় ৪০ মিনিটের যাত্রাপথ পেরিয়ে উখিয়া কোর্ট বাজার হয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ইনানি জেটি ঘাটে।

ইনানি নৌ-বাহিনী জেটি ঘাটেও নেয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি। চারপাশে অবস্থান নেন র‌্যাব, নৌ-বাহিনী, কোস্টাগার্ড, কমান্ডো, ও বিজিবির সশস্ত্র সদস্যরা।

বাস থেকে নামিয়ে তাদের সৈকতের পাশে তাঁবুতে নেয়া হয়। অন্যপাশে মঞ্চে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের মহাপরিচালকসহ দুই দেশের সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এসময় বিজিপির ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল তাদের নিতে আসেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের তুলে দেন বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম। বলেন, 'আইডেন্টিফিকেশনের জন্য মিয়ানমারের অ্যাম্বাসেডর নিজেই উপস্থিত ছিলেন। নাম-ঠিকানা দেখে তিনি নিজেই তাদের আইডেন্টিফাই করেছেন। এরপর সিল দিয়ে তিনি স্বাক্ষর করছেন। এরপরের ডেস্কে বিজিপির যারা এসেছেন তারা কাজ করছেন।'

এরপর যাচাই-বাছাই শেষে একে একে সবাইকে তোলা হয় জাহাজে। দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রথমধাপে ১৬৫ মিয়ানমার নাগরিক নিয়ে যাত্রা শুরু করে পর্যটকবাহী জহাজ কর্ণফুলী এক্সপ্রেসওয়ে। তুলে দেয়া হয় গভীর সাগরে রাখা মিয়ানমার নৌ-বাহিনীর জাহাজে। দ্বিতীয় ধাপে বাকি ১৬৫টি জনকেও পৌঁছে দেয়া হয় মিয়ানমারের জাহাজে।

ব্রিফিংয়ে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, মানবিক বিবেচনায় তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছিলো। তবে আর কাউকে অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবে না। মিয়ানমার নাগরিকদের আশ্রয় ও চিকিৎসা সেবা দেয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দেশটির রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ে।

আশরাফুজ্জামান বলেন, 'বাংলাদেশ মানবিকতার পরিচয় দিতে গিয়ে এ কাজ সম্পন্ন করেছে। সামনের দিনগুলোতেও যেন বর্ডারের নিরাপত্তা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত থাকে সেজন্য আমাদের বিজিবির প্রত্যেক সদস্য বদ্ধপরিকর। এ বিষয়ে আমরা কোনভাবে পিছপা হব না। নতুন কোনো অনুপ্রবেশ ঘটতে দেয়া হবে না।'

গত ৪ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে এই ৩৩০ জন বাংলাদেশে অবস্থান নিয়েছিলেন। মিয়ানমার বাহিনীর নিয়ে আসা অস্ত্র আইন অনুযায়ী আর ফেরত দেয়া হয়নি।