স্বাস্থ্য
দেশে এখন
0

সরকারিতে ৩৭৫ টাকা, বেসরকারিতে ছাড়ায় লাখ

আয়েশি কেবিনে একই সেবা দুই লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে কোথাও কোথাও। সিজারিয়ানে এমন পার্থক্য দেশজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।

মাত্র ৩৭৫ টাকা খরচে সিজারিয়ান শেষ হয়ে যাচ্ছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সেন্টারের ওয়ার্ডের ফ্রি বেডে। সেখানে নেই বেড ভাড়া ও ওষুধের খরচ। খাবারের জন্যও দিতে হয় না টাকা। একটি পুরো সিজারিয়ান শেষ হতে ৫০০ টাকাও খরচ করতে হয় না। যাতায়াত, টিস্যু পেপার, বাবুর জামা কাপড়, নানা পদের ফল কেনায় অনেক টাকা খরচ হলেও সেটির সঙ্গে নেই হাসপাতালের কোনো সম্পর্ক ।

সিজার করতে আসা এক মা বলেন, 'সিজার করতে ৩৫০ টাকা খরচ হয়েছে। আর কোনো টাকা লাগেনি। ৫ টাকার টিকিট নিয়ে সিরিয়াল দিলে প্রথম দিনেই আটজন ডাক্তার দেখে।'

পেয়িং বেডে ঠিক একই ডাক্তার, অপারেশন থিয়েটার ও ওষুধ ব্যবহার করে সিজারিয়ানের খরচ পৌঁছে যায় প্রায় চার হাজার টাকায়। প্রতিদিন কেবিন বেডে ২০০ টাকা, খাবারে ১৫০ টাকার সঙ্গে যোগ হয় ২ হাজার টাকার ওটি চার্জ।

মোহাম্মদ ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার ডা. মুনিরুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, 'যদি একজন মা সিজারের পরে ৫ দিন এখানে থাকে তাহলে তার চার্জ আসবে ১ হাজার ৭৫০ টাকা এবং ওটি চার্জ ২ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা।'

সব সরকারি হাসপাতালের চিত্র অনেকটা এমন হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রি বেডেও রোগীকে কিনতে হয় ৫ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকার ওষুধ। সঙ্গে ১ হাজার ৫০০ টাকার ওটি চার্জ। ওষুধের তেমন সরবরাহ না থাকায় ফ্রি বেডেই রোগীর সিজারিয়ান খরচ ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। অন্যদিকে পেয়িং বেডে কেবিন চার্জ যুক্ত হলে ১৫ থেকে ১৭ হাজারের মধ্যে শেষ হচ্ছে সিজারিয়ান।

এই খরচই বেসরকারিতে ১৫ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। মূল খরচ হয় সার্জন ফি ও মানানসই কেবিনে।

বেসরকারিতে সিজারিয়ানের খরচ বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ কেবিনের চার্জ, যেখানে মা ও পরিবারের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। যার সঙ্গে প্রসব নিরাপদ হওয়া না হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। এছাড়া সরকারিতে যে সার্জন নামমাত্র মূল্যে সিজারিয়ান করছেন তাকেই হাসপাতাল ভেদে দিতে হচ্ছে ১৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এমন প্রেক্ষাপটে হাসপাতালের সক্ষমতা ও সেবার মানভেদে সিজারিয়ানের খরচের একটি নীতিমালা জরুরি বলে মনে করেন গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার। বলেন, 'অনেক করপোরেট হাসপাতালে তাদের খরচ বেশি। সেজন্য তারা তাদের রোগীর কাছে থেকে টাকা বেশি নেয়। অবশ্য এর জন্য একটি নীতিমালা থাকা উচিত। কতটুকু টাকা নেয়া উচিত তার জন্য।'

দেশে মোট সিজারিয়ানের ৮৩ শতাংশই সম্পন্ন হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরাম আয়েশের আগে নিরাপদ সেন্টার খুঁজে বের করা জরুরি যেখানে থাকবে সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে মা ও শিশুকে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার দেয়ার সব ব্যবস্থা।

একটি নিরাপদ প্রসব নিশ্চিতে সবার আগে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল নির্বাচন জরুরি। সেই হাসপাতাল বেসরকারি হলে এবং খরচ নাগালের মধ্যে না থাকলে সরকারি হাসপাতাল নির্বাচনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। অন্যথায় কখনও মা, কখনও নবজাতক, কখনও কখনও মা নবজাতক উভয়েই মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে।

এসএস