মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বছরের পর বছর ধরে দেশটির সেনাবাহিনীর সাথে বিভিন্ন গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব- সংঘাত লেগেই রয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যা প্রবল আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জোরালো করেছে আরাকান আর্মিসহ কয়েকটি গোষ্ঠী। তারা সম্মিলিতভাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এরইমধ্যে কোনো কোনো সীমান্ত শহর দখলও করে নিয়েছে আরাকানরা।
কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এ সংঘাতের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্তেও। এদিকে বিদ্রোহীদের হামলার মুখে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের ৯৫ সীমান্তরক্ষী। এতে করে সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু ক্যাম্পপাড়া, মাঝেরপাড়া, কোনারপাড়া এলাকার মানুষ আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকার ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও ঘোলাটে বলছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যে কোন দেশের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ বা সংঘাতে সকল বাহিনীই সীমান্ত এলাকাকে অগ্রাধিকার দেয়। আরাকান আর্মিও তাই করছে। সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের এখন দ্রুত মিয়ানমারের বন্ধু ও পরামর্শক দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করা দরকার বলে মনে করেন তারা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মনে রাখা দরকার যে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বার্মা-১ নামের একটা আইন করেছে। সেই আইনে বলা আছে, ওই দেশে বিভিন্ন যে গোষ্ঠী লড়াই করছে তাদের সহযোগীতা প্রেসিডেন্ট দিতে পারবে। তার মানে এই বিষয়টায় অ্যামেরিকারও মনযোগ পড়েছে।’
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘বার্মার যে সংঘাত বা যুদ্ধ সেটি কোনভাবেই বাংলাদেশের জন্য কল্যাণকর বার্তা বয়ে আনছে না।’
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীন বিষয়ে বাংলাদেশকে কোনভাবেই জড়ানো উচিত হবে না। বিষয়টিতে জড়াতে কোনো কোনো দেশ বাংলাদেশকে উস্কানি দিতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। এছাড়া বিলম্বিত হতে পারে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। প্রভাব পড়তে পারে দেশের অর্থনীতিতেও।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, আশ্রয় নেয়া বিজিপি সদস্যদের কিভাবে ফেরত পাঠানো হবে তা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে সেটির বিষয়ে আলোচলা চলছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, বাংলাদেশের সীমান্ত পুরোপুরি রক্ষিত আছে।
মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। যার বড় একটি অংশই পড়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায়।