নয়াদিল্লি-অটোয়া কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র ও উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগের জেরে রীতিমতো কোণঠাসা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এই ডামাডোলের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্সে বিস্ফোরক এক পোস্ট দিয়েছেন ক্ষমতাসীন লিবারেলদের ঘনিষ্ঠ মিত্র নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা জাগমীত সিং।
শুক্রবার এক্সবর্তায় জাগমীত দাবি করেন, জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী। পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শীতকালীন ছুটি শেষে আগামী ২৭ জানুয়ারি হাউজ অব কমন্সে আনুষ্ঠানিকভাবে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করতে যাচ্ছেন তারা।
এবিসি নিউজ বলছে, ক্রিস্টিয়ার পদত্যাগের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর পদের পাশাপাশি নিজ দল লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব ধরে রাখতেও বেগ পেতে হচ্ছে ট্রুডোকে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, বিগত নির্বাচনগুলোতে নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রধান জাগমীত সিংয়ের সহায়তা ছাড়া ক্ষমতায় আসতে পারতো না ট্রুডোর লিবারেল পার্টি।
কানাডীয় পার্লামেন্টে লিবারেল পার্টির একচ্ছত্র আধিপত্য নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠতা কিংবা ক্ষমতা ধরে রাখার প্রশ্নে দীর্ঘদিন ধরে বামপন্থী নিউ ডেমোক্র্যাট পার্টির শরণাপন্ন হতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টিকে।
দ্য ট্রিবিউনের এডিটোরিয়াল বলছে, রাতারাতি লিবারেল ও নিউ ডেমোক্র্যাটদের এই বিভাজন ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রশ্নে জাস্টিন ট্রুডোর জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে।
বিশেষ করে রাজনৈতিক সতীর্থরা যখন একে একে জাস্টিন ট্রুডোর ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছেন- তখন কোন কৌশলে ক্ষমতা ধরে রাখবেন তিনি- এ প্রশ্নও এড়ানোর সুযোগ নেই।
ক্ষমতায় টিকে থাকার অনিশ্চয়তার মধ্যেই মন্ত্রিসভায় বেশকিছু রদবদল এনেছেন জাস্টিন ট্রুডো। যদিও শুক্রবার দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে চলমান রাজনৈতিক বিভাজন নিয়ে মুখ খোলেননি তিনি। কানাডীয় গণমাধ্যম বলছে, ছুটির মৌসুম শেষে নিজের পরিকল্পনা নিয়ে উপদেষ্টাদের সাথে আলাপ করবেন জাস্টিন ট্রুডো।
লিবারেল-নিউ ডেমোক্র্যাটদের এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সুযোগ নিচ্ছে বিরোধীদল কনজারভেটিভ পার্টিও। কারণ দ্রুততম সময়ে নির্বাচন হলে তাদের জেতার সম্ভাবনাই বেশি। শুক্রবার দলের নেতা পিয়ের পলিয়েভরে মন্তব্য করেছেন, অনতিবিলম্বে পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকার জন্য গভর্নর জেনারেলকে আবেদন জানাবে কনজারভেটিভ পার্টি।
ট্রুডোর এই 'ডাউনফল' কিংবা রাজনৈতিক চাপে পড়ার পেছনে তার দূরদর্শিতার অভাবকে দায়ী করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ক্যাবিনেট ও দলের সদস্যদের প্রাধান্য না দিয়ে ভূরিভূরি রাজনৈতিক পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছেন ট্রুডো। এতে করেই দলীয় বিভাজন ও অনাস্থা জানানোর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
দ্য ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর অধ্যাপক গ্রেস স্কোগস্ট্যাড বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ক্ষমতার মূল কেন্দ্রবিন্দু। রাজনৈতিক উপদেষ্টা দিয়ে কার্যালয় ভরে ফেলেছেন ট্রুডো। তারা কেউ নির্বাচিত প্রতিনিধি নন। ট্রুডো নিজে এদের নিয়োগ দিয়েছেন। আপনিও শুনে থাকবেন ট্রুডোর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সমালোচনা হচ্ছে, যে কোনো সমস্যায় তিনি তার উপদেষ্টাদের পরামর্শ চান, অথচ কেবিনেট সদস্যদের মতামতকে কোনো গুরুত্ব দেন না।’
বড় দিন আর নতুন বছরের ছুটি শেষে গদি বাঁচানোর জন্য নতুন কোনো কৌশল খুঁজতে হবে জাস্টিন ট্রুডোকে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাথে আপোস করতে না পারলে ট্রডো'র পতন ফেরানো কঠিন হবে। শেষ পর্যন্ত কী আছে জাস্টিন ট্রুডোর ভাগ্যে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হতে পারে আগামী ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।