আলো নয়, কাঠের তৈরি ক্রুশ হাতে সিরিয়ার রাজধানী দামস্কের রাস্তায় নেমেছেন হাজারও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। স্বৈরাচারী বাশার-আল আসাদের পতনের পর বড়দিনের ঠিক আগ মুহূর্তে আবারও উত্তাল সিরিয়ার প্রধান সড়কগুলো।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) হামার উত্তরে খ্রিষ্টান অধ্যুষিত আল-সুকায়লাবিয়াহ অঞ্চলের প্রধান ক্রিসমাস ট্রিতে আগুন লাগানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ দেশটির সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়, হামার আঞ্চলিক সেন্ট্রাল কমান্ড ভবনের সামনে জড়ো হয়েও প্রতীকী বিক্ষোভ করেছেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা।
একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘হামায় ক্রিসমাস ট্রি পোড়ানোর প্রতিবাদ ও আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজপথে নেমেছি। হামার কয়েকটি গির্জায়ও হামলা হয়েছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারী হিসেবে আমাদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা চাই।’
অন্য একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘শুধু আজকে নয়, গেল দুই সপ্তাহ ধরে চার্চসহ অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ক্রিসমাস ট্রিতে আগুন দেয়া হল।’
ইরানের সংবাদমাধ্যম ইরনা জানায়, এদিন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাচ্ছে হামার দক্ষিণাঞ্চলীয় এক খ্রিষ্টান ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার প্রধান ক্রিসমাস ট্রি।
পরে জানা যায়, মুখোশধারী এক দুর্বৃত্তকে ওই ক্রিসমাস ট্রিতে আগুন দিতে দেখেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। কিন্তু তারা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে, বন্দুক উঁচিয়ে তাদের ভয় দেখায় ঐ দুর্বৃত্ত। বিবিসি বলছে, স্থানীয় দমকল বাহিনী আসার আগেই ঘটনাস্থল থেকে পালায় সে।
সংখ্যালঘুদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতার ওপর হুমকি আসায় এর দায় সিরীয় প্রতিরক্ষা দপ্তরকেই নিতে হবে এমন অভিযোগ করেছেন তারা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বিক্ষোভকারী অভিযোগ করেন, এর আগে ১৮ ডিসেম্বর হামারই একটি গির্জায় প্রবেশ করে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে এক দুর্বৃত্ত।
মূল ক্রুস ছাড়াও সমাধির নামফলক ও এপিটাফ লেখা পাথর ভাঙার চেষ্টা করে সেই ব্যক্তি। হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটি এস কর্মীদের সিরিয়ার নাগরিক ভাবতে আপত্তি না জানালেও তাদের সাথে আসা আফগান বা উজবেকিস্তানের নাগরিকদের আর সিরিয়ায় থাকার প্রয়োজন নেই বলে দাবি করেন এই খ্রিষ্টান বাসিন্দারা।
স্থানীয় একজন বলেন, ‘আফগানিস্তান ও উজবেকিস্তানের বাসিন্দাদের দেশে ফিরে যেতে দিন। তাদের আর সিরিয়ায় থাকার প্রয়োজন নেই। হায়াত তাহরির আল-শামের সদস্যরা সিরীয় নাগরিক। তারা আমাদের দেশের মানুষ। বাকিদের এখানে আর প্রয়োজন নেই।’
বাশার আল-আসাদের পতনের পর জাতিগত বা ধর্মীয় কোন্দলের আশঙ্কায় বড়দিনের আয়োজন সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেন গির্জার প্রধান ধর্মীয় নেতারা। যদিও আসাদবিরোধীদের পক্ষ থেকে বারবার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের আশ্বস্ত করা হয়।
বিদ্রোহীদের নেতা খোদ আবু মুহাম্মদ আল-জুলানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সিরিয়ায় খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা নিরাপদে বসবাস করতে পারবেন। ক্রিসমাস ইভের বিকেলে এই সাম্প্রদায়িক কোন্দল সিরীয় অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তিকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করবে এমনটাই মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।