গাজার বাসিন্দা ইকবাল আল জাইদি। উপত্যকাটিকে ইসরাইলি অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত পরিবারসহ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন মোটা আটবার। একটু খানি আশ্রয়ের খোঁজে দিশেহারা হয়ে ছুটে বেরিয়েছেন গাজার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। প্রতিনিয়তই সংকুচিত হয়েছে মাথা গোজার ঠাঁই, ভর করেছে গভীর এক অনিশ্চয়তা।
সবশেষ মধ্য গাজার দেইর আল বালায় আল আকসা মসজিদের কাছে ছোট্ট একটি তাবুতে আশ্রয় হয় তার, সেখানেও শেষ রক্ষা হয়নি। দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচেই আশ্রয় নিতে হয়েছে জাইদিকে।
গাজার বাসিন্দাদের মধ্যে একজন বলেন, 'আমাদের একটি বাড়ি ছিল। সেখানে আমার সন্তান ও নাতি-পুতিদের নিয়ে বেশ ভালোই ছিলাম আমরা। অথচ এখন এমন একটি জায়গায় মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে, যেটি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ৪ মিটার/৪মিটার। এমনকি এই জায়গাটিও হামলার হাত থেকে রেহাই পায়নি। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে বসে আছি।'
জাইদির মতোই একই পরিণতি উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য গাজার বেশিরভাগ বাসিন্দার। একটুখানি মাথা গোজার ঠাঁইয়ের খোঁজে যেতে হয়েছে এক আশ্রয় কেন্দ্র থেকে অন্য আশ্রয় কেন্দ্রে। তবুও স্থায়ী আশ্রয় হয়নি কোথাও। একের পর এক শরণার্থী শিবির ও আশ্রয় কেন্দ্র হামলার শিকার হওয়ায় ধ্বংস হয়ে গেছে সব। প্রতিমুহূর্তে হামলা আর মৃত্যুভয় গ্রাস করছে অসহায় এসব ফিলিস্তিনিকে। পরিবার-পরিজন ও ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা এসব মানুষ জানেনা তাদের ভবিষ্যৎ কি।
গাজার এক শরণার্থী শিবির জানান, 'কোথাও কোন নিরাপত্তা নেই। একটুখানি আশ্রয়ের জন্য যেখানেই গেছি সেখানেই হামলা হয়েছে। গোটা গাজা তিনভাগে ভাগ হয়ে গেছে। যে যেই এলাকায় আছেন, সেই এলাকার বাইরে যাওয়া যাচ্ছেনা। নিজের বাড়িতে পর্যন্ত কেউ যেতে পারছেনা। পোলিও টিকা কার্যক্রমের কারণে কিছু জায়গায় হয়ত হামলা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু আমরা এই ধরনের সাময়িক যুদ্ধবিরতি চাইনা। আমরা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চাই।'
এতকিছুর পরই গাজায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলামত দেখতে পাচ্ছেনা কেউই।
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও, যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইতিবাচক কোন সাড়া মিলছেনা কোন পক্ষের কাছ থেকেই। প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। গাজার এমন কোন জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবেনা যেখানে হামলা চালায়নি ইসরাইলি বাহিনী।
উত্তর থেকে দক্ষিণ, মধ্য গাজা থেকে গাজা সিটি, সবখানেই অব্যাহত রয়েছে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও রক্তপাত, লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। সব হারিয়ে নিঃস্ব এসব বাসিন্দা জানেনা, আর কত রক্ত ঝরলে বন্ধ হবে সংঘাত, শান্তি ফিরবে গোটা উপত্যকায়, হাসি ফিরবে অসহায় ফিলিস্তিনিদের মুখে।