যেন তালেবানের আফগানিস্তান দখলের পুনরাবৃত্তি। বিদ্রোহীদের হঠাৎ অপ্রত্যাশিত উত্থান আর একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলে ঢলে গেছে বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের স্বৈরাচারী শাসন। সুতোয় ঝুলন্ত রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ-ভাগ্য, সবই ছিঁড়ে পড়েছে।
দেশের তৃতীয় বৃহৎ শহর হোমসের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার মাধ্যমে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাতেই রাজধানীর আরও কাছে পৌঁছে যায় বিদ্রোহীরা। এক সপ্তাহে পঞ্চম শহর দখল করে রাত পেরোনোর আগেই রোববার (৮ ডিসেম্বর) ভোরে অবস্থান নেয় দামেস্কের প্রবেশপথে। এরই মধ্যে বিনা বাধায় রাজধানীর ভেতরে বিদ্রোহীরা প্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। নগরীর মূল চত্বরে জড়ো হয়ে উচ্ছ্বসিত স্লোগান দিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
সিরীয় বিদ্রোহী নেতা আবু মোহাম্মদ আল-গোলানি বলেন, ‘ন্যায় আর অন্যায়কে আলাদা করার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত পার করছি আমরা। সকল যোদ্ধার প্রতি আমাদের আহ্বান, আগেও যেমনটা বলেছি, মানুষের প্রতি সদয় থাকুন। যারা অস্ত্রসমর্পণ করবে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। যারা পালিয়ে যেতে চায়, তাদের যেতে দিন।’
এরই মধ্যে রাজধানী ছেড়ে পালিয়েছেন সিরিয়ার আড়াই দশকের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। বিবিসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, অজ্ঞাত গন্তব্যের উদ্দেশে বিমানে চড়ে দামেস্ক ছেড়েছেন তিনি। জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আসাদের দামেস্ক ত্যাগের খবর নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। যদিও কয়েক ঘণ্টা আগেও আসাদ রাজধানী ত্যাগ করেননি বলে দাবি করে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এবং মিত্র ইরান।
ফ্লাইটরাডার ওয়েবসাইটের তথ্য, বিদ্রোহীদের রাজধানী দখলের খবর আসতে শুরু করার পরই আসাদকে নিয়ে দামেস্ক বিমানবন্দর ত্যাগ করে একটি সিরীয় বিমান। আসাদের শক্ত ঘাঁটি বিবেচিত সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে যাত্রা শুরু করলেও কিছুক্ষণ পরই ইউটার্ন নিয়ে বিপরীত দিকে যেতে থাকে। এর কয়েক মিনিট পরই রাডার থেকে গায়েব হয়ে যায় বিমানটি। বিমানে আসাদই ছিল কিনা, সে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
জানা গেছে, শনিবার মধ্যরাতেই রাজধানীর মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরেই সেনা প্রত্যাহার করে পিছু হঠতে শুরু করে সরকারি বাহিনী। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, কুখ্যাত সাদনায়া কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে কয়েক হাজার বন্দিকে। কারাগারটিতে আসাদবিরোধীদের ওপর নির্মম নির্যাতন ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো বলে রয়েছে অভিযোগ।