পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্র

অভিযানে রাশিয়ার সেনাবাহিনী
অভিযানে রাশিয়ার সেনাবাহিনী | ছবি: সংগৃহীত
0

হামলা আর পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্র। রুশ সীমান্ত অঞ্চল কুরস্কে ইউক্রেনের সেনা অনুপ্রবেশের পর থেকে দুই দেশের যুদ্ধ পরিস্থিতি এখন চরমে। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ইউক্রেন দেড়শ'র বেশি ড্রোন হামলা চালানোর পর সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ইউক্রেনে রাতভর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। পশ্চিমারা যুদ্ধ পরিস্থিত উস্কে দিচ্ছে দাবি করে পরমাণু ডক্ট্রিন পরিবর্তনের কথা জানিয়েছে রাশিয়া। অন্যদিকে ইউক্রেন বলছে, পশ্চিমাদের কাছ থেকে তাদের আরও প্রয়োজন সামরিক সহায়তা।

ইউক্রেন দখলে এতোদিন একতরফা হামলা করছিল রাশিয়া আর ইউক্রেন হামলা প্রতিহত করে নিজ ভূখণ্ডকে রক্ষার চেষ্টা করছিলো। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযানের দৃশ্যপট পাল্টেছে। ইউক্রেনে পুরোদমে সেনা অভিযান শুরুর পর এই প্রথম রাশিয়ায় সর্বোচ্চ পরিসরে হামলা চালালো কিয়েভ। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ১৫ টি অঞ্চল থেকে দেড়শ'র বেশি ড্রোন ভূপাতিত করেছে তারা। এরমধ্যে ছিল রাজধানী মস্কো ও এর আশপাশের এলাকা। রুশ সীমান্ত এলাকা কুরস্কে অভিযানকে ঘিরে বলা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম রাশিয়ায় এতো বড় পরিসরে সেনা অনুপ্রবেশ ঘটাতে পেরেছে কোন দেশ।

রোববার ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় একটি জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন ধরে যায়। এই ড্রোন হামলায় বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও বেলগোরোদে আহত হন বেশ কয়েকজন। এদিকে, প্রতিশোধ হিসেবে ইউক্রেনের খারকিভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। আহত হন প্রায় অর্ধ শতাধিক। ইউক্রেনের দাবি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে রাশিয়া। খারকিভে হামলার পর পশ্চিমাদের ইউক্রেনকে সহযোগিতায় আরও সমরাস্ত্র দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কি বলেন, এক সপ্তাহে ইউক্রেনে ১৬০ টি ক্ষেপণাস্ত্র, ৭৮০ টি গাইডেড এরিয়েল বোমা ও ৪শ' ড্রোন দিয়ে পুরো দেশের বিভিন্ন শহর আর সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে।

ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, 'রাশিয়া নির্মমভাবে হামলা করছে। আমাদের কাছে থাকা ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এতো সহজ নয়। আমাদের ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি তাদের হামলা প্রতিহত করতে আরও সামরিক সহায়তা প্রয়োজন। আমাদের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োজন। রাশিয়ার সন্ত্রাসকে থামাতে হবে।'

যদিও ইউক্রেন বারবার পশ্চিমাদের কাছে সমরাস্ত্র চেয়ে আসলেও পেন্টাগন জানিয়েছে, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আর ইউক্রেনের প্রত্যাশা করা উচিত নয়। কারণ এই আতাসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত পশ্চিমাদের কাছেই সীমিত আর এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি সময়সাপেক্ষ।

এদিকে, কুরস্কে অব্যাহত আছে ইউক্রেনের সেনা অভিযান। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩শ' স্কয়ার কিলোমিটার এলাকা দখলের দাবি করেছে কিয়েভ। আটক করা হয়েছে প্রায় ৬শ' রুশ সেনাকে। অন্যদিকে, রাশিয়াও ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দোনেৎস্কে সেনা সক্ষমতা বাড়াতে শুরু করেছে।

ইউক্রেনকে পশ্চিমারা সমরাস্ত্র সহায়তা অব্যাহত রাখায় বরাবরই ক্ষুব্ধ রাশিয়া। রুশ ভূখণ্ডে ইউক্রেনের হামলার পর মস্কো জানিয়েছে, পশ্চিমারা যুদ্ধ পরিস্থিতি যেভাবে উস্কে দিচ্ছে, তাতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ডক্ট্রিনে পরিবর্তন আনবে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ২০২০ সালে জারি করা ডিক্রি অনুযায়ী, বর্তমানে যে পরমাণু ডক্ট্রিন আছে, তাতে বলা হয়, কোন শত্রু দেশ যদি পরমাণু হামলা চালায় বা হামলার ঝুঁকি তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে দেশ রক্ষার স্বার্থে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে রাশিয়া। রুশ কর্তৃপক্ষ জানায়, পশ্চিমারা যুদ্ধ উস্কে দিলে এই ডক্ট্রিনে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবে রাশিয়া।

tech