বিশ্ববাজারে গেল জানুয়ারি মাসেই স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রতি আউন্স ২১শ' ডলারে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। চলতি সপ্তাহে অনেকটা কমে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ওঠানামা করছে দুই হাজার ৫০ ডলারের আশপাশে। এমন সময় চাহিদা যেন আকাশ ছুঁয়েছে জনসংখ্যা ও অর্থনীতিতে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ চীনে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২৩ সালে চীনে বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি রেকর্ড সর্বোচ্চ দামে স্বর্ণ কিনছেন সাধারণ ভোক্তারাও। বিশ্ববাজার থেকে দেশটি সামগ্রিকভাবে ৯৬০ টন স্বর্ণ কিনেছে। এর মধ্যে শুধু বার আর মুদ্রাই ২৮ শতাংশ বেড়ে আমদানি হয়েছে ২৮০ টন, আর অলঙ্কার আমদানি ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩০ টনে।
চীনের ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী ওয়াং লিজিন বলেন, গত বছর চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে স্থানীয় মুদ্রায় স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। মূলধারার অন্য সব আর্থিক সম্পত্তির মধ্যে তুলনা করলে স্বর্ণ থেকে প্রাপ্ত লাভই আসলে সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি নতুন চন্দ্রবর্ষকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে চীন। উৎসব উপলক্ষে শেষ কয়েক সপ্তাহে স্বর্ণালঙ্কার কেনার ঝোঁক তো বেড়েছেই, তার ওপর গেল বছর স্বর্ণের দামে ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি এ বছরও থাকবে, এমন আশায় সঞ্চয় ও ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে বেড়েছে স্বর্ণের চাহিদা।
চীনা স্বর্ণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গেল বছর চীনে মোট স্বর্ণ বিক্রির পরিমাণ এক হাজার টন ছাড়িয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে নয় শতাংশ বেশি। এর মধ্যে স্বর্ণের বার আর মুদ্রা বিক্রি হয়েছে ২০২২ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি, আর আট শতাংশ বিক্রি বেড়েছে স্বর্ণালঙ্কারের।
স্বর্ণ ব্যবসায়ী শেন মেংই বলেন, ‘বছর শেষের বোনাস পেয়ে তা স্বর্ণে বিনিয়োগ করছেন ভোক্তারা। নতুন বছর শুরু উপলক্ষে অনেকেই অলঙ্কার কিনছেন।’
চীনের পর বিশ্বে স্বর্ণের দ্বিতীয় ভোক্তা দেশ ভারতে গেল বছর স্বর্ণ বিক্রি কিছুটা কমে ৭৪৮ টনে নেমে এসেছে। তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ভোক্তা পর্যায়ে স্বর্ণ কেনাবেচায় শীর্ষ দশের বাকিরা হলো তুর্কিয়ে, ইরান, রাশিয়া, জার্মানি, মিশর, ভিয়েতনাম ও সৌদি আরব। চীনা ভোক্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও স্বর্ণের চাহিদা বাড়ায় বিগত বছরের শেষে বিশ্ববাজারে প্রতি ট্রয় আউন্স স্বর্ণের দাম দুই হাজার ডলারে পৌঁছায়, যা আর কমেনি। জানা যায়, গেল বছর বিশ্বজুড়ে স্বর্ণের মোট চাহিদা ছিল চার হাজার ৮৯৯ টন, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এর আগে বহুজাতিক আর্থিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ইউবিএস আভাস দেয়, যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমার সম্ভাবনায় চলতি বছর বিশ্বজুড়ে আরও বাড়বে স্বর্ণের দাম। বছর শেষে প্রতি আউন্স স্বর্ণের মূল্য বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২২শ' ডলারে। সুদের হার কমলে বন্ডের মতো বিনিয়োগের বিভিন্ন মাধ্যমের অন্যতম বিকল্প হিসেবে মানুষের আগ্রহ বাড়ে স্বর্ণের প্রতি।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলা ও ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণের প্রতি ঝোঁক বাড়তে শুরু করে।