পরিষেবা
অর্থনীতি
0

মুখ থুবড়ে পড়েছে খুলনার কয়েক শ’ কোটি টাকার প্রকল্প

গত কয়েক বছরে খুলনায় বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। তবে নানা কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং অনেক প্রকল্পে কাজের ধীরগতিতে অপচয় হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অর্থ। এসব জায়গায় বিনিয়োগ করা হয়েছে শত শত কোটি টাকা। এছাড়াও সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

খুলনার আইটি খাতকে আরো উন্নত করার জন্য নগরীর লবণচরা এলাকায় রূপসা নদীর পাড় ঘেঁষে শুরু করা হয় হাইটেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্প। বর্তমানে বন্ধ রয়েছে এ প্রকল্পের কাজ। ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালে এই হাইটেক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন সরকার। চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৩৩ শতাংশ। আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে লাপাত্তা ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলএনটি।

এ প্রকল্পের আওতায় একটি ৭ তলা ভবন, সিনেপ্লেক্স ও অভ্যন্তরীণ সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ হবে। এতে বিভিন্ন সেক্টরে প্রায় তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল। তবে পার্কের কাজ বন্ধ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

এলাকাবাসীদের মধ্যে একজন জানান, এলাকার ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের জন্য অনেক কিছু শিখতে পারবে। অনেক কিছু জানতে পারবে। এলাকায় একটা প্রতিষ্ঠান চালু হবে। অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

এই কাজটা দ্রুত চালু হোক। আমরাও চাই এলাকায় একটা ভালো প্রতিষ্ঠান চালু হোক।

খুলনায় চলমান আর একটি নিভু নিভু প্রকল্প শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২০ সালের ১৩ জুলাই মন্ত্রিসভায় বিশ্ববিদ্যালয়টির আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন পায়। পরে চলতি বছরের মে মাসে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি। তবে ৫ আগস্টের পর অনেকটা অনিশ্চিত এ প্রকল্পের কাজ। ক্ষুদ্র পরিসরে কার্যক্রম চললেও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে নারাজ দায়িত্বরতরা।

নগরীর লবণচরা এলাকায় একটি জায়গা নির্ধারণ করা হলেও শুরু হয়নি কোনো কাজ। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। এই টাকায় জমি অধিগ্রহণ, বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল, একাডেমিক ভবন ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করার কথা রয়েছে। চলতি বছর শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল এর কাজ।

এদিকে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা হয় খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৯ সাল থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও নেই কোনো প্রশাসনিক ভবন। এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এ প্রকল্প। ভাড়া বাড়িতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, 'যে কার্যক্রমগুলো হাতে নিয়েছিল সেগুলো প্রক্রিয়া ধীর গতিতে হয়েছে। এই কারণে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে অসুবিধা হচ্ছে।'

বিগত সরকারের আমলে নেয়া আরেকটি প্রকল্প একটি খুলনার রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে নগরীর খালিশপুরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ২০২৩ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে গ্যাসের অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও চলছে প্রকল্পের কাজ।

এরই মধ্যে গত আগস্টে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিদর্শনে আসেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এ সময় তিনি প্রকল্পটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। বিগত সরকারকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ করে দিতেই এ ধরনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তার।

উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, 'কার স্বার্থে এখানে ৮ হাজার ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ হল। কিন্তু মানুষ এটা থেকে কোনো উপকার পাচ্ছে না। এখান অনিয়মের মহোৎসব হয়েছ। আমরা চেষ্টা করবো এটাকে পার্শিয়ালি চালানো যায় কিনা।'

অর্থনীতিবিদদের মতে, জনকল্যাণের জন্য হাতে নেওয়া চলমান প্রকল্পগুলোকে এগিয়ে নিতে হবে। তা না হলে অপচয় হবে রাষ্ট্রীয় অর্থের।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগ বিভাগীয় প্রধান মেহেদি হাসান বলেন, 'কিছু কাজ এমন হয়ে গেছে যার থেকে কোনো কল্যাণ পাওয়া সম্ভব হয় না। যারা দায়িত্বে আছে তাদের উচিত এই জায়গাটা সরকারি মহলে উপস্থাপন করা।'

এদিকে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো বাদ দিয়ে জনসাধারণের উপকারে আসে এমন প্রকল্পে জোর দেওয়ার দাবি।