পরিষেবা
অর্থনীতি
0

৯ বছর পর পুরোপুরি শেষ হলো পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ

সমাপনী ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী

৯ বছর পর পুরোপুরি শেষ হলো পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ। এর আগে ২০২২ সালে সড়ক এবং ২০২৩ সালে চালু করা হয় রেলপথ। বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে করা স্বপ্নের এ সেতুর প্রকল্পের কাজের সমাপনী ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে আজ (শুক্রবার, ৫ জুলাই) মাওয়া উত্তর থানা এলাকায় সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী মানুষের যে চাপ রয়েছে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে তা কমানোর সুযোগ রয়েছে।

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয় আজ থেকে দুই যুগ আগে। প্রাক-সমীক্ষার পর ২০০১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তার হাতেই ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন হয় ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর। এতে যোগাযোগ সহজ ও ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হয়েছে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের।

মূল সেতুর নির্মাণ শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর। ৯ বছরেরও বেশি সময় লাগে যার সড়কপথ চালু হতে। আর রেলপথ চালু হয় প্রায় দেড় বছর পর ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর। সেতুর রেল ও সড়কপথ তৈরিতে এখন পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। আর এর পুরোটাই হয়েছে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে অনেক বাধাবিপত্তি পার করতে হয়েছে সরকারকে। প্রথমে অর্থ যোগান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক। পরে ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে আসে বিশ্বব্যাংক। অবশেষে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী।

সেতুর সড়কপথ উদ্বোধনে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে দক্ষিণাঞ্চল ও পদ্মার দু'পাড়ের মানুষ। মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী ফলক ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উন্মোচনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

সড়ক ও রেল প্রকল্পের পর বাকি ছিল নদী শাসনসহ কারিগরি কিছু কাজ। অসমাপ্ত কাজসহ ৩০ জুন পদ্মা সেতুর বিশাল কর্মযজ্ঞ পুরোপুরি শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যার আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী‌। এ উপলক্ষে মাওয়ার উত্তর থানা সংলগ্ন মাঠে আয়োজন করা হয়েছে সুধী সমাবেশের। একই মাঠে উদ্বোধন হয়েছিল পদ্মা সেতু এবং রেল সংযোগের। আর এ কারণে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে পদ্মার দু'পাড়ে।

রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, আমলাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দেড় হাজার অতিথি আমন্ত্রণ পেয়েছেন সুধী সমাবেশে। মূলত পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নকে স্মরণীয় করে রাখতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সভাস্থলে বাড়ানোর নিরাপত্তা। সম্পন্ন হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে বরণের প্রস্তুতিও।

সেতু বিভাগ জানিয়েছে, পদ্মার মূল সেতু নির্মাণে বরাদ্দ অর্থ থেকে ৬০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। আর তা থেকেই সমাপনী অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে। সম্প্রতি সেতুমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ প্রকল্পে সব মিলিয়ে দেড় হাজার কোটি টাকার মতো সাশ্রয় হবে।

অন্যান্য প্রকল্পের মতো পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের বিদায় নিতে হচ্ছে না। সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে গঠন করা হচ্ছে কোম্পানি। এতে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন সদ্য সমাপ্ত প্রকল্পের ৫৯ কর্মী।

ঢাকাতে মানুষের যে চাপ রয়েছে তা কমানোর সুযোগ রয়েছে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে। যা বাস্তবায়নে এখনো সেতুকে কোনো কাজে লাগানো যায়নি বলে জানান যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামছুল হক।

তিনি বলেন, 'যদি পরিকল্পিত উন্নয়ন শিল্পাঞ্চল তৈরি করতে পারতাম তাহলে শিল্প থেকে পণ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে বর্হিবিশ্বে পরিবহনে আমাদের যে উপযোগীতা দরকার ছিল, সেটা পদ্মা সেতু দিতে পারতো। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আমাদের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়াতে হবে।'

তাই সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া ঢাকার চাপ কমাতে সেতুকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা থাকা দরকার ছিল বলে জানান তিনি।

ড. সামছুল হক আরও বলেন, 'ঢাকার উপর অনেক চাপ। ঢাকাকে বিভক্ত করার কথা ছিল। ভূমি সমন্বিত করার মাধ্যমে যদি কর্মসংস্থান তৈরি করা যেতো, তাহলে চাপ অনেকটা কমে আসতো। সেটারও কোনো দৃশ্যমান পরিকল্পনা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।'

গত দুই বছরে পদ্মা সেতু দিয়ে ১ কোটি ২৭ লাখ যানবাহন চলাচল করেছে। এতে টোল আদায় হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। আর এই সেতুর কারণে নতুন এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের।