ব্যাংক-বিমা কিংবা আর্থিক লেনদেনে সরকারি-বেসরকারি ৪৩টি সেবা নিতে বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হয় আয়কর রিটার্নের প্রাপ্তি স্বীকারপত্র। তবুও, জরিমানাহীন দু'মাস সময় বাড়িয়েও, অর্থ বছরের প্রথম অর্ধেকে ৯৮ লাখেরও বেশি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারের বিপরীতে রিটার্ন জমা পড়েছে ৩০ লাখেরও কম। এ জন্য কর ব্যবস্থাপনার নানা সীমাবদ্ধতাকেই দায়ী করা হয়।
আয়কর ব্যবস্থাপনা পুরোটাই আইনভিত্তিক কার্যক্রম। রিটার্ন জমা দিতে করদাতাকে জানাতে হয় তার আয়ের উৎস, খরচের খাত ও সঞ্চয়ের হিসাব। তুলে ধরতে হয় ব্যাংক ঋণ কিংবা গচ্ছিত সম্পদের হিসাবও। এরমধ্য থেকে সুযোগ থাকছে রেয়াত কিংবা কর অব্যাহতির। আর এসব হিসাব মেলাতেই জটিলতায় পড়েন করদাতারা। তাই হিসাবের অংক সহজ করার দাবি অনেকদিনের।
একজন করদাতা বলেন, 'অনেক কাগজের প্রয়োজন হয়, আমাদের কাজের বাইরে আলাদা করে সময় দিতে হয়। অনেকসময় হিসাবগুলো ঠিকভাবে মিলাতেও পারি না। হিসাবগুলো কোনো অ্যাপের মাধ্যমে হলে আমাদের অনেক সুবিধা হতো রিটার্ন করতে।'
এদিকে, করের আওতা বাড়াতে আইনের সংশোধন ও ধারাবাহিক সংস্কার করছে এনবিআর। এক পাতার রিটার্ন চালুসহ বাড়ানো হচ্ছে সার্ভারের মান। তবুও, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের এই সময়েও যথেষ্ট অগ্রগতি নেই এনবিআরের অনলাইন কার্যক্রমে। তবে, এই ঘটাতি মেটাতে আগ্রহী দেশের একাধিক ক্লাউডভিত্তিক ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন প্রতিষ্ঠান।
মোবাইল অ্যাপভিত্তিক রিটার্ন কার্যক্রম না আসলেও দেশে বেসরকারিভাবে রিটার্ন প্রস্তুতে কাজ করছে ট্যাক্স ডু, বিডিট্যাক্স মাস্টার, বিডি ট্যাক্স ডট কমসহ একাধিক ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, আয়কর আইন অনুসারেই সাজানো হয়েছে অটো ক্যালকুলেট পদ্ধতির অ্যাপ্লিকেশনগুলো।
এতে বেতনভোগী, ব্যবসায়ী কিংবা সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, সবার জন্যই সহজ হবে রিটার্ন প্রস্তুত করা। ফরম পূরণে ভুল তথ্য দিলেও জানান দিবে সফটওয়্যার নিজেই। এ কাজের জন্য প্রতিবছর একবার ব্যবহারে গ্রাহককে গুণতে হবে নির্দিষ্ট অর্থ।
অ্যাপলিকেশন প্রস্তুতকারীরা বলছেন, বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রিটার্ন প্রস্তুতে কাজ করতে চান তারা। যার তথ্য জমা হবে এনবিআরের সার্ভারে। শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিভিত্তিক অনুমোদন দিলেই কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হবে।
এসএমএসি অ্যাডভাইজারি সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, 'যেসব জায়গায় কুয়েরি আছে, সফটওয়্যার অটোমেটিক সেখানে সবকিছু মনে করিয়ে দেবে। কোথাও অমিল থাকলে সেটিও অ্যাপ বের করে দেবে। একবার ডাটা দিলে অ্যাপে তা সেভ থাকবে, বারবার একই ডাটা দিতে হবে না। প্রতিবছর শুধু নতুন ডাটাগুলো দিলেই হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অনুমোদন দিলে একটি অসাধারণ অর্জন হবে এটি।'
এনবিআর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজস্ব বোর্ড চাইলেই তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব। তবে, এজন্য রাজস্ব বোর্ডের তথ্য সংগ্রহে রাখার সক্ষমতার ওপর জোর দিয়েছেন তারা। বিশ্বস্ততা অর্জন করতে হবে রিটার্নদাতার আমানত রক্ষায়।
এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. আলমগীর হোসেন বলেন, 'অ্যাপের সিস্টেম যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য, সঠিকভাবে পরিকল্পনা করতে পারে, ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধা, অ্যাপ যেসব ডাটা নেবে তার জন্য আমাদের নিজস্ব ডাটাবেজ আছে কি না সবদিকে খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে।'
চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা বাজেটের ৮৬ শতাংশ। এর মধ্যে আয়কর থেকে আসবে ৩৪ শতাংশ।