বাজার , স্বর্ণের বাজার
অর্থনীতি
0

ব্যাগেজ রুলসে স্বর্ণ ঢুকছে দেশে, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

ব্যাগেজ রুলসের আওতায় স্বর্ণ প্রবেশ করছে দেশের বাজারে। কম দামে পাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও কিনছেন এসব স্বর্ণ। তাতে প্রভাব পড়ছে স্বর্ণ আমদানিতে। সরকারও হারাচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব। এমন অবস্থায় ব্যাগেজ রুলসের সংশোধন চায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। যদিও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাগেজ রুলসের নিয়ম খুব কঠিন করা উচিৎ হবে না। তাতে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরের কাস্টমস এরিয়া। শুল্ক মুক্ত পণ্য নিয়ে যারা ফিরছেন, তারা বেরিয়ে যাচ্ছেন গ্রীন চ্যানেল দিয়ে। আর শুল্কযুক্ত পণ্যের জন্য আসতে হয় রেড চ্যানেলে।

রেড চ্যানেলের কাউন্টারে তখন কয়েকজনের ভিড়। কেউ এনেছেন স্বর্ণ কেউবা মোবাইল ফোন। তারই হিসেব নিকেশ চলছে এখানে।

যদিও ব্যাগেজ রুলসের আওতায় যে পরিমাণ স্বর্ণ দেশে আসে তাতে চিন্তিত জুয়েলারি খাতের ব্যবসায়ীরা। ঢাকা কাস্টমস হাউসের তথ্য বলছে, গেলো তিন বছরে ব্যাগেজ রুলসের আওতায় দেশে আসা স্বর্ণের পরিমাণ ৯২.৮৯ টন। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৯২ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে স্বর্ণ আমদানি হয়নি এক রত্তিও।

আমদানি না হওয়ার পেছনে শুল্ক ও করের পার্থক্যকে দায়ী করেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি ভরি স্বর্ণে ৪ হাজার টাকা শুল্ক ও কর দিতে হয় ব্যাগেজ রুলে। অথচ স্বর্ণ নীতিমালা অনুযায়ী আমদানিতে সেটি ১৩ হাজার ৫০০ টাকা।

এতে করে ব্যাগেজ রুলস ও আমদানিতে ভরিপ্রতি দামের পার্থক্য ৯ হাজার ৫০০ টাকা। ১০ ভরিতে সেই অঙ্ক ৯৫ হাজার ২৮২ টাকা। তাই তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় নির্ভরশীলতা থেকেই যাচ্ছে ব্যাগেজ রুলসের আওতায় আসা স্বর্ণে। দামে কম থাকায় নিয়মিত ব্যবসায়ীরাই বিদেশ ফেরতদের কাছ থেকে কিনছেন এসব স্বর্ণ।

ব্যবসায়ীরাদের একজন বলেন, 'আমরা ব্যাগেজ রুলসের আওতায় স্বর্ণ কিনি তাদের কাছ থেকে তবে অবশ্যই এই স্বর্ণের ক্যাশ মেমো আছে কিনা সেটা যাচাই করি।'

এমন অবস্থায় স্বর্ণ আমদানিকে উৎসাহ দিতে ব্যাগেজ রুলসের সংশোধন চায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। বিনাশুল্কে স্বর্ণালংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে ৫০ গ্রাম করা, একই ধরনের অলংকার দুটির বেশি না আনা ও একজন যাত্রীকে বছরে একবারই ব্যাগেজ রুলসের সুবিধা দেয়ার কথা বলছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এই সংগঠন।

বাজুসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুদুর রহমান বলেন, 'ব্যাগেজ রুলসের আন্ডারে যখন স্বর্ণ আনার পারমিশন দেয়া হবে সেটা যদি চাহিদা অনুযায়ী কম হয় তাহলে আমাদের দেশের বাজারে একটা প্রভাব পড়বে। ব্যাগেজ রুলস একটা খুব সহজ পদ্ধতি।'

যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য মো. আব্দুল কাফী বলেন, 'ব্যাগেজ রুলসের নিয়ম খুব কঠিন করা উচিৎ হবে না। তাতে জুয়েলারি ক্রেতা সুবিধা ও রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে। তবে নিয়মে ভারসাম্য আনার সুযোগ আছে।'

যদিও ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাগেজ বিধিমালায় স্বর্ণালংকারের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে কাস্টমস শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অপরিশোধিত স্বর্ণ আনার প্রবণতা কমাতে ২২ ক্যারেটের উপর স্বর্ণ আনার সুযোগ থাকছে না।

ঢাকা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো. আল আমিন বলেন, 'যারা কাঁচা স্বর্ণ নিয়ে আসবে তারা স্বর্ণালংকার হিসেবে আনার সুযোগ পাবে না। কেবলমাত্র ২২ ক্যারেট বা তার নিম্নে স্বর্ণালংকার হিসেবে স্বর্ণালংকার আনার সুযোগ পাবে।'

তাতে স্বর্ণালংকারের নামে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিমানবন্দর দিয়ে ২৪ ক্যারেটের ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবার নিয়ে আসা বন্ধ হবে। কমবে গেলো বছর গুলোর চেয়ে ব্যাগেজ রুলসে আনা স্বর্ণের পরিমাণও।

ইএ