প্রতিবছরই প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে তার হাতেগড়া নুহাশ পল্লীর লিচু তলায় ভিড় করেন ভক্ত, কবি, লেখক আর নাট্যজনেরা। ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করেন জনপ্রিয় এই লেখক-নির্মাতাকে। এবছরও নানা আনুষ্ঠানিকতায় হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করছেন ভক্ত অনুরাগীরা।
১৯৪৮ সালের এদিনে নেত্রকোনার কেন্দুয়ার কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজ। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার এক ভাই কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। অন্য ভাই কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক আহসান হাবীব।
১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস 'নন্দিত নরকে'। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস 'শঙ্খনীল কারাগার'। এই উপন্যাস দু'টির কারণে তখনকার সাহিত্যবোদ্ধা মহলে বেশ প্রশংসিত হন তিনি। এরপর দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের লেখক জীবনে নিজেকে বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তায় শীর্ষে নিয়ে যান। গল্প বলার অসামান্য ভঙ্গির কারণে 'গল্পের জাদুকর' হিসেবে তাকে গণ্য করা হয়। তার লেখা গল্প-উপন্যাসে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনধারার নিঃসংকোচ বর্ণনা পাওয়া যায়।
দুই শতাধিক উপন্যাস লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ। এর মধ্যে রয়েছে 'জোছনা ও জননীর গল্প', 'দেয়াল', 'বাদশাহ নামদার', 'কবি', 'শ্রাবণ মেঘের দিন', 'লীলাবতী', 'গৌরীপুর জংশন', 'নৃপতি', 'বহুব্রীহি', 'মধ্যাহ্ন', 'এইসব দিনরাত্রি', 'দারুচিনি দ্বীপ', 'নক্ষত্রের রাত' ইত্যাদি। তার সৃষ্ট চরিত্র 'হিমু' ও 'মিসির আলী' ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সায়েন্স ফিকশন এবং কিশোর গল্প লিখেও তিনি দারুণ খ্যাতি অর্জন করেন। গল্প ও উপন্যাসের মতো হুমায়ূন নির্মিত নাটক ও চলচ্চিত্রও আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পায়। 'আজ রবিবার', 'এইসব দিনরাত্রি', 'বহুব্রীহি', 'অয়োময়', 'কোথাও কেউ নেই', 'নক্ষত্রের রাত', 'আগুনের পরশমণি', 'শঙ্খনীল কারাগার', 'শ্যামল ছায়া', 'শ্রাবণ মেঘের দিন', 'দারুচিনি দ্বীপ', 'ঘেটুপুত্র কমলা' তার জনপ্রিয় নাটক ও চলচ্চিত্র।
সাহিত্যে অবদানের জন্য হুমায়ূন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ অগণন পুরস্কার লাভ করেন। একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও।
যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের ১৯ শে জুলাই মারা যান হুমায়ূন আহমেদ । কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রায় দশ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।