এক সময় বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে জরুরিভাবে চালু করা হয়েছিল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেবার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যু সরবরাহে কিছুটা সাড়াও ফেলেছিল। তবে এসব কাজে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সিন্ডিকেটের লোকেরা অতিমাত্রায় লাভবান হওয়ার জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান)-২০১০ নামে একটি আইন করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। যার সরাসরি অর্থ দাঁড়ায় বিনা টেন্ডারে কাজের দায়মুক্তি।
কুইক রেন্টালের নামে সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বছরের পর বছর ক্যাপাসিটি চার্জের নামে চলেছে নয়ছয়। গত ১৪ বছরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে নয়ছয় হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা।
শুধু ২০২৪-২৫ অর্থবছরেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিগত সরকার বরাদ্দ রেখেছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। যার বেশিরভাগই ব্যয় হতো কুইক রেন্টালে।
ব্যক্তি বিশেষকে সুবিধা দিতে ও পছন্দ মতো সিদ্ধান্ত নিতেই এই আইনটি করে শেখ হাসিনা সরকার। এই আইনের কয়েকটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়। রিটের ওপর একটি রুল জারি করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন। রায়ে বলা হয়, কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুৎ খাতের সব কাজের বৈধতা নেয়ার আইনের ধারা অসাংবিধানিক। মন্ত্রীর একক ক্ষমতা দেয়া জনবিরোধী সিদ্ধান্ত।
রিটকারির আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘২০ মেগাওয়াট সাপ্লাই দিচ্ছে, কিন্তু ১০০ মেগাওয়াটেরই টাকা পাবে। অর্থাৎ এটা লুটপাটের বিশেষ বিধান আইন হয়ে গেছে। আদালত এজন্য ৬(২) কে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন। আনলিমিটেড, অসীম ক্ষমতা এক ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছে। এটা একটা প্রজাতন্ত্রে হতে পারে না।’
এই রায়ের ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে সরকার যেকোনো চুক্তি বাতিল করতে পারবে। দেশের স্বার্থে বন্ধ থাকা সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সচল করতে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘আদালত বলেছে যে সরকারের চেষ্টা করা উচিত যে সরকার মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো যেন পূর্ণ উৎপাদনে যায়। উৎপাদন যাতে বাড়ে।’
বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম জিইয়ে রাখতে আইনটি করা হয়েছে বলে হাইকোর্টের রায়ে উঠে এসেছে।