অনুষ্ঠান শেষে উদ্যোক্তা সেঞ্চিমে রাখাইন বলেন, ‘কীভাবে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায়, সেই বিষয়ে কোনো ব্যাংক যে কৃষকদের ডেকে এনে প্রশিক্ষণ দেয়, তা আমি জীবনে প্রথম দেখলাম। এ প্রশিক্ষণ আমাদের জন্য খুবই দরকারি।’
অন্যদিকে চকরিয়ার নার্সারির ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ব্যাংক আমাকে কোনো কিছু বন্ধকী ছাড়াই ঋণ দিয়েছে। এতে আমার মূলধন সংকট দূর হবে। ব্যাংক যদি এভাবে আমাদের মতো গরিব কৃষকের পাশে দাঁড়ায় তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে।’
সেঞ্চিমে রাখাইন ও আব্দুল্লাহর মতো প্রায় তিনশো কৃষি উদ্যোক্তাই এদিন আশা ও অনুপ্রেরণা নিয়ে ফিরেছেন কক্সবাজারের লং বিচ হোটেল থেকে। কৃষি উদ্যোক্তা সমাবেশ ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণটি কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং কৃষি উদ্যোক্তাদের নতুন স্বপ্নের দিগন্ত ছোঁয়ার বাস্তব অভিজ্ঞতা।
সকাল থেকেই অনুষ্ঠানস্থল ভরে উঠেছিল প্রাণচাঞ্চল্যে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা উদ্যোক্তারা একে অপরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। কৃষিকে কেন্দ্র করে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার আলোচনা হয় আয়োজনে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘দেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে আমাদের কৃষি খাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। উদ্যোক্তাদের দক্ষতা, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে কৃষিকে টেকসই পথে এগিয়ে নিতে হবে।’
আরও পড়ুন:
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান শরীফ জহীর বলেন, ‘আমরা দেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য কৃষির টেকসই উন্নয়ন ও কৃষি উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের বিশ্বাস এ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি কৃষি উদ্যোক্তাদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ বলেন, ‘আমরা শুধু ঋণ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছি না। আমরা চাই উদ্যোক্তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মনির্ভরশীল হোক, সফল হোক, এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখুক।’
দিনব্যাপী এ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন, পুলিশ সুপার মো. সাইফুদ্দীন শাহিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. বিমল কুমার প্রামানিক, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ এম খালেকুজ্জামান এবং সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুজয় পাল।
স্বাগত বক্তব্যে ‘ভরসার নতুন জানালা’ প্রকল্পের সমন্বয়ক ও বিটিভির মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক বলেন, ‘এ উদ্যোগ শুধু প্রশিক্ষণ নয়, এটি কৃষি উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণের পথকে আরও সুদৃঢ় করছে।’
অনুষ্ঠানে ইউসিবির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাবিল মোস্তাফিজুর রহমান ও আদনান মাসুদ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। দিনশেষে জেলার ১৩ জন কৃষককে উন্মুক্ত ঋণ প্রদান করা হয়।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তারা জানান, সফল উদ্যোক্তা হতে হলে বাজার বিশ্লেষণ, ব্যবসা পরিকল্পনা, প্রযুক্তি ব্যবহারের কৌশল এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরি। এছাড়া ব্যাংকের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা এবং আর্থিক সহায়তার সুযোগগুলো কাজে লাগানোর বিষয়েও হাতে কলমে নির্দেশনা পেয়েছেন তারা।
অংশগ্রহণকারীরা অনেকেই বললেন, এর আগে ইউসিবির সহায়তায় তারা আধুনিক বীজ, সার কিংবা কৃষি যন্ত্রপাতি পেয়েছেন। তবে সরাসরি প্রশিক্ষণ পেয়ে এবার তারা আরও আত্মবিশ্বাসী।





