ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়ার পাঁচ বছর পর সংস্কারকাজ শেষে ফ্রান্সের ঐতিহাসিক নটরডেম গির্জার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হাস্যোজ্জ্বল করমর্দন নড়বড়ে সরকার ব্যবস্থায় বসে থাকা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে।
এদিন ব্রিটেনের রাজ পরিবারের সদস্য প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প। এ যেন নতুন প্রত্যাবর্তন, সবার চোখে মুখে আশার আলো, এবার বুঝি বিশ্ব রাজনীতিতে আসবে স্থিতিশীলতা।
ফ্রান্সে ঐতিহাসিক এই ক্যাথেড্রালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বহুদিন পর এলিসি প্রাসাদে এক ছাদের নিচে জড়ো হন বিশ্ব নেতারা। অনুষ্ঠিত হয় এজেন্ডার বাইরে ট্রাম্প, ম্যাক্রো আর জেলেনস্কির বৈঠক। ২০ মিনিটের এই বৈঠকের বিস্তারিত জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যুদ্ধ কীভাবে চলবে, ট্রাম্পের ভূমিকা কি থাকবে, সেসব নিয়েই হয়েছে আলোচনা। বৈঠক শেষে বেশ উৎফুল্ল দেখা গেছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করেছি। শুধু তাই নয়, ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই সেনা অভিযানের মধ্যে ইউক্রেনের মানুষ কীভাবে নিজেদের মনোবল ধরে রেখেছে, ট্রাম্পকে জানিয়েছি। আমাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন। একসঙ্গে কাজ করবো। ইউক্রেনের অবস্থান পরিষ্কার আরও কাজ করতে হবে।’
নটরডেম ক্যাথেড্রালের উদ্বোধন উপলক্ষে ফরাসি প্রেসিডেন্ট স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বের প্রভাবশালী সব ব্যক্তিদের। ইমানুয়েল ম্যাক্রো ৫ বছর পর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, যখন এই ক্যাথেড্রালে আগুন লাগে, ফ্রান্সের পাশে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্বে হঠাৎ করেই পাগলামি শুরু হয়েছে। অনেই ধারণা করছেন, ট্রাম্প ইউরোপ ও তার মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব দিতে পারেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোকে।
নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক আগে থেকেই ভালো এই দেশের মানুষের প্রতিভা অনেক । এখানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত আমরা প্রতিরক্ষা নিয়ে যৌথভাবে কাজ করবো। কিন্তু বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা পাগল প্রায়। এই বিষয়ে কথা বলেছি।’
যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেয়ার পরিবর্তে ইউরোপীয় দেশগুলোর নিজ দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে পারেন ট্রাম্প। নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর থেকেই বাইডেন প্রশাসনের ভয়, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেয়া করা বন্ধ দিতে পারে ট্রাম্প সরকার।
প্যারিসে ব্রিটেনের রাজ পরিবারের সদস্য প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প। ক্যাথেড্রালের উদ্বোধন উপলক্ষে এক ছাদের নিচে জড়ো হন, বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক, সঙ্গে ফ্রেঞ্চ ধনকুবের বার্নার্ড আরনল্ট, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওলাদ আর নিকোলাস সারকোজি।
বিশ্বনেতারা যখন এই ক্যাথেড্রালের উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন, তখন নটরডেমের বাইরে সিন নদীর তীরে ভিড় করছেন প্যারিসের সাধারণ মানুষ। ২০১৯ সালে আগুন লাগার পর এই স্থাপনা জনসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বিগত পাঁচ বছরে এই স্থাপনাকে আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে কাজ করেছেন দুই হাজার মানুষ। ৯শ' বছর আগের পুরানো ফরাসি ঐতিহ্যের বাহক এই ভবন ঘিরে অনেক স্মৃতি দেশের সাধারণ মানুষের।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের তথ্য বলছে, এই স্থাপনা পুনর্গঠনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৮৮ কোটি ডলার এসেছে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে এই চার্চের ছাদে আগুনের সূত্রপাত হয়ে আইকনিক এই স্থাপনার অনেকটাই পুড়ে যায়। পুনরায় উদ্বোধনের পর এভাবেই বেজে ওঠে নটরডেমের চিরপরিচিত সেই ঘণ্টা।