ধামরাইয়ের কায়েতপাড়ার যশোমাধব মন্দির। প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো কর্মচাঞ্চল্য। ছোট শিশুদের মুখে ভাতের ধর্মীয় আচার পালনের পাশেই চোখে পড়লো বিয়ের আয়োজনেরও। যেখানে উৎসবের সব অনুসঙ্গই বিদ্যমান।
নানা মাধ্যমে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিশেষ করে হিন্দুদের জীবনযাপন নিয়ে অপপ্রচার থাকলেও প্রান্তিক জনপদ কায়েতপাড়ায় দেখা মিললো সনাতনীদের ধর্মীয় আচার পালনে স্বতঃস্ফূর্ত চিত্র।
একই পাড়ায় ৫ দশকের পুরাতন মসজিদেও দেখা মিললো ধর্ম চর্চার। পাশাপাশি মহল্লায় প্রার্থনার মাধ্যমে শান্তির বার্তা ছড়াচ্ছেন দুই ধর্মের মানুষই। গ্রামের মানুষদের স্পষ্ট কথা, দীর্ঘকাল ধরেই সম্প্রীতি বজায় রয়েছে এ গ্রামের সব ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে। তাদের শঙ্কা, পরিস্থিতি যতটা না ধর্মীয় তারচেয়ে বেশি রাজনৈতিক ফাঁদ।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘আমরা এখানে আছি হিন্দু মুসলিম সবাই একতাভাবেই থাকি এখানে।’
আরেকজন বলেন, ‘এইগুলা রাজনীতির কারণে হয় । এইসব তো আর দেখার বিষয় না বা বলার বিষয় না।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলছেন, সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার যে শঙ্কার কথা বলা হয়েছে, তা একদমই সঠিক নয়। ভারতের গণমাধ্যমে প্রচার করা অতিরঞ্জিত সংবাদের কারণে উল্টা তারা অপমানিত বোধ করছেন বলেও দাবি করেন তারা।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘আমরা হিন্দু সম্প্রদায়কে হয়রানি করছে? কে বা কারা?’
আরেকজন বলেন, ‘একটা গুজবের কারণে আমরা সবাই ভিত ছিলাম। কিন্তু তারা যা বলছে এখানে সেরকম ঘটনা ঘটেনি।’
সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে রাজনীতির মাঠে সবসময়ই ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করেছে ক্ষমতালোভীরা। জানান, রাষ্ট্রের ঐক্যের পাশাপাশি যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দ্রুত বিচার কার্যকর করলে আস্থা তৈরিতে সহায়ক হবে।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রাসেল হোসাইন বলেন, ‘সরকার সরকারের জায়গা থেকে কাজ করছে। আমার যারা হিন্দু প্রতিবেশী আছে বা আমার রুট লেভের মানুষ গুজবের কারণে একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে। এগুলো আসলে এই কারণে করা হচ্ছে। যার পাশে যে হিন্দু প্রতিবেশী আছে তাকে এগিয়ে আসতে হবে।’
একই সাথে আন্তর্জাতিক নানা মাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু অত্যাচার নিয়ে যারা মিথ্যাচার করেছে তা গুরুত্ব দিয়ে সুযোগসন্ধানীদের মুখোশ উন্মোচন করে বিচারের আওতায় আনা উচিত বলেও মত বিশ্লেষকদের।