দিন দিন কিয়ার স্টার্মার প্রশাসনের হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। মুসলিম ও অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ দাঙ্গায় উত্তাল যুক্তরাজ্য। চার শতাধিক উগ্র ডানপন্থি ব্যক্তিকে আটকের পরেও শান্ত হচ্ছে না পরিস্থিতি। কঠোর থেকে কঠোরতর সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধা করছে না নবনিযুক্ত সরকার।
সবশেষ বুধবার (৭ আগস্ট) লিভারপুলে দাঙ্গায় অংশ নেয়া ৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ঘোষণা করে দেশটির আদালত। সাউথপোর্টে মসজিদের বাইরে বিক্ষোভ উসকে দেয়ায় আদালতের কাছে ক্ষমা চান এক অভিযুক্ত। রায়ের পর রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি জানান, কারণই যাই হোক না কেনো, দাঙ্গায় অংশগ্রহণকারী সকলকে শিগগিরই শাস্তি দেয়া হবে। ফল ভোগের জন্য বিক্ষোভকারীদের প্রস্তুত থাকার কথাও জানান তিনি।
ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের শতাধিক স্থানে দাঙ্গার আশঙ্কায় মোতায়েন করা ছয় হাজার পুলিশ সদস্যকে। গোয়েন্দাদের ধারণা, হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে অভিবাসন কেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও তাদের অফিস এবং দোকানপাট। এদিকে দেশজুড়ে পাল্টা আন্দোলনের ডাক দিয়েছে ফ্যাসিবাদ ও বর্ণবাদবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন। সংঘর্ষের ভয়ে বন্ধ রাখা রয়েছে দোকানপাট। অনেক স্থানেই দোকানের দরজা ও জানালা ঢেকে ফেলা হয়েছে কার্ডবোর্ড দিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়, সাধারণ মুসলিম, এমনকি রাজনীতিবিদদের কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
স্থানীয় একজন বলেন, 'আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। আমার মেয়ে আছে। সে মিশ্র জাতির। তার জন্য এ সময়টা কঠিন। সত্যি বলতে এ অবস্থায় আমি আতঙ্কিত। অভিবাসন বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকতে পারে। তবে হুমকি, ভয় দেখানো কিংবা সহিংসতার কোনো যৌক্তিকতা নেই। যারা এই কাজ করছে, সত্যিকার অর্থেই তারা বোকা।'
সাবেক স্কটল্যান্ড বিষয়ক ফার্স্ট মিনিস্টার হামজা ইউসাফ বলেন, 'সত্যি বলতে চিন্তা হচ্ছে যুক্তরাজ্যে পরিবার নিয়ে থাকতে পারবো কী না? শুধু আমিই নই, মুসলিম সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ আমাকে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে খুঁদে বার্তা পাঠিয়েছে।'
১৪ বছর পর যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় এলেও মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে দশকের সবচেয়ে বড় দাঙ্গার সম্মুখীন হতে হলো লেবার পার্টিকে। শেষবার যখন দেশটিতে দাঙ্গা হয়, তখন পাবলিক প্রসিকিউশন বিভাগের ডিরেক্টর ছিলেন স্টার্মার। তার নেতৃত্বে দ্রুতগতির বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় প্রায় এক হাজার ব্যক্তির বিচার।
এবার স্টার্মারের হাতে দায়িত্ব আগের চেয়ে বড়। ফিনানশিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, সহিংসতাকারীদের বিচার করার পাশাপাশি অভিবাসন ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে মন জয় করতে হবে ডানপন্থিদের। একইসঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হবে, এর মাধ্যমে বামপন্থিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অন্যদিকে অতিরিক্ত কয়েদিতে উপচে পড়ছে যুক্তরাজ্যের কারাগারগুলো। গেল মাসে বেশকিছু কয়েদি মুক্তের নির্দেশ দেয় স্টার্মার প্রশাসন। তবে নতুন করে বিপুলসংখ্যক দাঙ্গাকারীর স্থান কারাগার হওয়ায় এ বিষয়টিও ভাবাচ্ছে নতুন সরকারকে। লেবার পার্টির সবলতা ও দুর্বলতা এবারের দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বের হবে আসবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
গেল মাসের শেষে যুক্তরাজ্যের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সাউথপোর্টে ছুরি হামলায় নিহত হন তিন কিশোরী। হামলাকারী একজন মুসলিম ও শরণার্থী- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে অনলাইনে। ট্যামওর্থ, মিডলসব্রো, বোল্টন, হাল ও ওয়েমাউথসহ বিভিন্ন শহরে চলে সহিংসতা। এরপর থেকে অভিবাসনবিরোধী উগ্র ডানপন্থিদের দাঙ্গায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে যুক্তরাজ্য।