দেশে এখন
0

মৌলভীবাজারে মাসে ৫-৬ লাখ টাকার মহিষের দই বিক্রি

মৌলভীবাজারে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে, নিরঞ্জনের ঝুড়িতে তৈরি দই। সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় নানা অনুষ্ঠানে এ দইয়ের চাহিদা তুঙ্গে। চাহিদা বাড়ায় মাসে বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার মহিষের দই।

নিরঞ্জন দাস ঝাড়ন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের বাসিন্দা। সকাল থেকে সন্ধ্যা, হাওরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মহিষের দুধ সংগ্রহ করেন। এরপর পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় শুরু হয় দই তৈরির কাজ।

সাধারণত হাড়ি বা পাত্রে দই তৈরি করা হয়। তবে নিরঞ্জনের দই তৈরির প্রক্রিয়া কিছুটা ভিন্ন। শুরুতে বাঁশের তৈরি ঝুড়ি বা দুছনিতে দেয়া হয় ময়দার প্রলেপ। এরপর তাতে ঢালা হয় জ্বাল করা মহিষের দুধ। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ধাপে তৈরি হয় দই। আর দুছনিতে তৈরি হয় বলে এটি দুছনির দই নামেও পরিচিত।

সুস্বাদু ও কেমিক্যালমুক্ত হওয়ায় মৌলভীবাজারে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। যেকোনো আচার অনুষ্ঠানও যেন দুছনির দই ছাড়া অসম্পূর্ণ। আর নাম-ডাক ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে এ দই সংগ্রহ করতে আসেন।

এক ক্রেতা বলেন, তিন দিন চেষ্টা করার পর একটা দই পেলাম। আমরা বাজার থেকে যে দই কিনি সেটা থেকে এর স্বাদ অনেকটা আলাদা। তাই বাড়িতেও নিয়ে যাচ্ছি।

চলছে মহিষের দুধ সংগ্রহ। ছবি: এখন টিভি

মহিষের দই প্রস্তুতকারক নিরঞ্জন দাস বলেন, 'প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার দই বিক্রি করি। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও দুছনির দই সরবরাহ করে থাকি। তবে মহিষের দুধ ও অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়েছে, লাভ কমে গেছে।'

এদিকে দই তৈরি ও বিক্রির কাজে ব্যবহৃত দুছনি বা ঝুড়ি বিক্রেতারাও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

এক ঝুড়ি বিক্রেতা বলেন, আগের থেকে আমাদের বিক্রি বেড়েছে। আমরা এখন আগের থেকে অনেক ভালো চলতে পারতেছি।

মহিষের দুধে থাকে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাসসহ বিভিন্ন উপকারী উপাদান। তাই মহিষের দুধে তৈরি দইও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আর স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় হওয়ায় দুছনির দইকে পেটেন্টের পাশাপাশি জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের পণ্য হিসেবেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস ছামাদ বলেন, 'এই দইটা মানুষের জন্য খুব স্বাস্থ্যকর। উন্নত বিশ্বেও মহিষের দুধের চাহিদা বেশি। আর দেশের সচেতন ব্যক্তিরাও মহিষের দুধ পছন্দ করে।'

জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, 'জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের পণ্য হিসেবে এই দুছনির দইটি আমরা অন্তর্ভুক্ত করছি। এর মাধ্যমে এটা আমরা সারাদেশ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর নাম পৌঁছে দিতে পারবো।'

হাওর-বাওর-বিল অধ্যুষিত এলাকা মৌলভীবাজার। জেলাটিতে ১৫ হাজার ৮১৮ টি মহিষ থেকে প্রতিদিন ১৪ হাজার ৫৩৫ লিটার দুধ আহরণ করা হয়। এটা আরও বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। এক সময় এই মহিষের দুধ থেকে তৈরি দুছনির দইটি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বেও পরিচিতি লাভ করবে আশা সংশ্লিষ্টদের।