দেশে এখন
0

অফলাইনের পুরনো কালোবাজারিরাই সক্রিয় অনলাইনে

রীতিমতো বাজার বসিয়ে বিক্রি হচ্ছে রেলের অনলাইন টিকিট। চাইলে ফোন করে দেয়া যাবে টিকিট বুকিং। অফলাইনের পুরনো কালোবাজারিরাই সক্রিয় অনলাইনে। বেনামে আগেই টিকিট কেটে ফেলছে তারা। সোজাপথে না পাওয়াদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে সেসব টিকিট। এতে যাত্রীর নাম পরিচয়েরও থাকছে না হদিস। দেশের বেশ কয়েকটি স্টেশনের আশপাশ ঘিরেই চলছে এসব কর্মকাণ্ড। এখন টিম খুঁজে বের করেছে অনলাইন অফলাইনের এই ছলচাতুরী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে ট্রেন স্টেশন। কাউন্টারের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে অফলাইনেই চলছে অনলাইনের টিকেট বিক্রির কাজ। এখান থেকে কাটা টিকিট এক যাত্রীকে দিয়ে যাচাই করা হলো স্টেশনে।

টিকিটের সব ঠিক আছে । কিভাবে প্রতিটি ট্রেনের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ টিকিট পায় অফলাইনের ব্ল্যাক সিন্ডিকেট? জানতে চাইলে মুহূর্তেই স্টেশন থেকে হারিয়ে যায় সিন্ডিকেট সদস্যরা।

স্টেশনে আর যাত্রাপথে যাত্রীর শেষ চেকার যে রেল পুলিশ, তারা কী করছে?

রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, 'টিকেট কালোবাজারি ঠেকানোর জন্য আমাদের পুলিশের গোয়েন্দা টিম তৎপর রয়েছে। আমরা জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত দুই মাসে ৪৫টি মামলা করেছি। যারা যাত্রী হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তারা জানালে আমাদের জন্য তাদেরকে শনাক্ত করতে সহজ হবে এবং গ্রেপ্তার করতে সহজ হবে।'

সত্যি যদি সতর্ক চোখটা থাকতো তা হলে স্টেশনের গা ঘেসে এমন হইচই করে আবারও চলতে পারতো না পুরনো সেই টিকিট কালোবাজারি।

যাত্রীরা বলেন, 'ব্ল্যাকে প্রচুর টিকেট পাওয়া যায়, কিন্তু কাউন্টারে বা অনলাইনে কোথাও টিকিট নেই।'

আরেকজন বলেন, 'টিকিট কাউন্টারের সামনে ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রির জন্য দাঁড়াবে, কিছুক্ষণ পর পুলিশ আসবে চলে যাবে।'

মূলত কালো টিকিটের এই বাজারের সন্ধান এখন টিভি কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে পায়।

যাত্রীরা এখন টিভিকে বলেন, 'ভাই আমরা টিকিট পাচ্ছি না। স্টেশন থেকে এসে টিকেট কিনেছি।'

আরেকজন যাত্রী বলেন, 'অনলাইনে টিকিট অ্যাভেলেবেল দেখাচ্ছে কিন্তু ক্লিক করার পর এক মিনিটেই সব শেষ। বুকিং দিতে পারছি না। বাধ্য হয়ে আমরা পরবর্তীতে টিকিট কাটতে যায় পানের দোকানে, সেখানে পেয়েছি। আমার তো টিকিট নিয়ে আসতে হবে, পরে এখানে চেকিংয়ের সময় বলে আপনার তো এনআইডির সঙ্গে মিলে নাই।  আমরা কি করবো? আমরা তো অসহায়।'

মুঠো ফোনে কল দিলে নাকি হোম সার্ভিসে মেলে ট্রেনের টিকিট। এমন আরও কিছু ফোন নম্বর এসেছে এখন টেলিভিশন-এর হাতে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, অনলাইনের ফাঁক ফোকরে জিম্মি ট্রেনের টিকিটিং ব্যবস্থা। ওয়েবসাইট নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা, তাদের হাতে কতটুকু নিরাপদ আসন্ন ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীদের টিকিট?

সহজ ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ দেবনাথ বলেন, 'কালোবাজারি আমরা দেখি না সরাসরি। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরাও ঘোর নিন্দা জানায়। কালোবাজারির বিরুদ্ধে আমরাও। আমাদের রেলওয়ের সঙ্গে অনেকগুলো বৈঠক হয়েছে। এক যাত্রী প্রায়ই টিকিট কাটে। তার এনআইডি ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে। রোজ রোজ তো একজনের টিকিট দরকার পড়ে না। সেক্ষেত্রে এরকম যাত্রীদের আইডেন্টিফাই করা হচ্ছে। এসব তথ্য আমরা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দিচ্ছি।'

এই যখন পরিস্থিতি, তাদের কাছে দায়িত্ব দিয়ে সামনে ঈদের রেলযাত্রা কিভাবে নির্বিঘ্ন করবে রেল মন্ত্রণালয়। জানতে চাওয়া হয়েছিল রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের কাছে।

এখন টিভিকে তিনি বলেন, 'যারা কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত, তাদের ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স। কঠিন ব্যবস্থা নিবো। রেলের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের সীমিত জনবল দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি, সবার সহযোগিতায় এটা ওভারকাম করতে পারবো।’

তবে এতসবের পরও প্রশ্ন থেকে যায়, অফলাইনের কালোবাজারিরা থেকে গেছে অনলাইন টিকিটিং সিস্টেমে। তা হলে যাত্রী সেবার পরিবর্তন কবে হবে? যদি তাদের নিয়ন্ত্রণ করাই না যায়, তাহলে যাত্রীসেবা নিশ্চিত হবে কীভাবে?

ইএ