দেশে এখন
1

দুগ্ধ উৎপাদনে কৃষকের সঙ্গে কোম্পানিগুলোর প্রতারণার অভিযোগ

উন্নত ষাড়ের বীজ সরবরাহের নামে সরকার ও বেসরকারি কোম্পানিগুলো দুগ্ধ উৎপাদন কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি সংগঠন। আজ (রোববার, ২০ অক্টোবর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। তাদের দাবি, এই সংগঠনটির নেতারা প্রকৃত দুগ্ধ খামারি এবং তারা এ খাতের আমূল সংস্কার চান।

উন্নত জাতের দুগ্ধ উৎপাদনকারী বিদেশি জাতগুলোর আমদানি, গো-খাদ্যের দাম কমানো, সরকারের নীতি পরিবর্তনসহ বেশ কয়েকটি ইস্যু নিয়ে তারা কথা বলেন।

তারা দাবি করেন, তাদের প্রস্তাব অনুসারে পদক্ষেপ নিলে প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক কমমূল্যে দুধ সরবরাহ করা যাবে। একইসঙ্গে সংকটগুলোর সমাধান না করলে দুগ্ধ উৎপাদনখাত বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলেও শঙ্কা করেন খামার সংশ্লিষ্ট এসব নেতারা।

বাংলাদেশ ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র প্রেসিডেন্ট মালিক মোহাম্মদ ওমর বলেন, সরকারি বা বেসরকারি কোনো খামারির ভালো বুল বা ষাড় নেই। আমরা খামাড়িরা প্রতারিত হচ্ছি। কারণ দেখা যাচ্ছে যে এক বছরে ১০০টা বাচ্চা উৎপাদন করছি। এর মধ্যে ১০টা ভালো, ২০টা এভারেজ হচ্ছে বাকিগুলো খারাপ হচ্ছে।’

তিনি বলেন, আমাদের একটা গরু পেলে গাভি তৈরি করতে ২ লাখ টাকা খরচ হয়। ২ লাখ টাকা খরচ করে তিন বছর পর যখন দেখি গরু খারাপ হচ্ছে তখন সেগুলো কসাইয়ের কাছে বিক্রি করা ছাড়া আমাদের উপায় থাকে না।’

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, দেশের দুধ ও মাংসের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ও জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে জোগান দিতে খামারিদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করা জরুরি। আমাদের দেশের খামারিরা সম্পূর্ণ নিজের পকেটের টাকা দিয়ে দুধ ও মাংস উৎপাদন করে। কিন্তু এর বিপরীতে ইউরোপীয়, আমেরিকার বা ভারতের খামারিদের জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে দুধ ও মাংস খাওয়ানোর জন্য সরকার ভর্তুকি প্রদান করে। যে কারণে খামারিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না আবার জনগণ ও সাশ্রয়ী মূল্যে দুধ ডিম মাংস খেতে পারে।

তারা বলেন, আমাদের বিষয়ে এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। ৫০ থেকে ৯১ পার্সেন্ট পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া ইউরোপীয় ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমদানিকৃত গুড়া দুধের কারণে আমাদের দেশের খামারিরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ আমাদের খামারিরা সম্পূর্ণ নিজের খরচে দুধ উৎপাদন করে কিন্তু ইউরোপীয় খামারিরা একই দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য অর্ধেকের বেশি উৎপাদন খরচ সরকারিভাবে ভর্তুকি পায়।

ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা ভালো জেনেটিক্সের অভাব। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে ভারতের খামারিরা প্রুভেন বুলে বীজ পেয়ে থাকে। প্রুভেন বুল অর্থাৎ একটি বুলের বীজ দেওয়ার সময় খামারি জানবে যে ভবিষ্যতে উক্ত বুলের বাচ্চা মায়ের চেয়ে কতটুকু বেশি দুধ দিবে বা এক ল্যাকটেশনে কত লিটার দুধ দেবে।

কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি বা বেসরকারি কোনো ব্রিডিং স্টেশনেই প্রুভেন বুল নাই। ফলে খামারিরা সিমেন কিনে প্রতারিত হচ্ছে। কারণ বুলের মেরিট না জানার ফলে খামারে বাচ্চা হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে যে বেশিরভাগ বুলের বাচ্চাই ৫/৭ লিটার দুধ দিচ্ছে। সামান্য কিছু বুলের বাচ্চা ১৫-২০ লিটার দুধ দিচ্ছে। যেখানে ইউরোপ আমেরিকা ব্রাজিল বা ভারতের খামারিরা প্রুভেন বুল পেয়ে থাকে ফলে উনারা জানেন যেকোনো বুলের বাচ্চা ভবিষ্যতে কতটুকু দুধ দেবে।

এএইচ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর