কীর্তনখোলা নদীর পূর্ব পাড়ে কর্ণকাঠীতে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। দেখতে দেখতে পেরিয়েছে এক যুগ। সময়টা খুব বেশি না হলেও প্রতিবছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তবে গত এক যুগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখ করার মতো নেই কোনো উদ্ভাবন। এ অবস্থার জন্য রাজনৈতিক কারণকে দায়ী করছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পর থেকেই রাজনৈতিক বিবেচনায় ভিসি নিয়োগ করায় গবেষণার পরিবর্তে রাজনৈতিক চর্চা বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।
কোস্টাল স্টাডিস এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, 'লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতির কারণে শিক্ষকরাও রাজনীতি সংস্কৃতি নিয়েই এগিয়ে যেতে চায়। এক্ষেত্রে গবেষণায় পর্যাপ্ত ফোকাসিং থাকে না তাদের।'
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ১০। এর মধ্যে পাঁচ জন শিক্ষকই রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। কর্মরত বাকি পাঁচ জন পড়াচ্ছেন ছয়টি ব্যাচ। একই অবস্থা অন্যান্য বিভাগগুলোরও। রয়েছে চরম শিক্ষক সংকট। আছে শ্রেণিকক্ষের সংকটও। এখানে পাঠদানের জন্য ভবন মাত্র একটি। কখনও কখনও ক্লাসরুমের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এসব কারণে এগোতে পারেনি গবেষণা কার্যক্রম।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. খোরশেদ আলম বলেন, 'পাঠদান এবং গবেষণার জন্য যে পার্টটার জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট বা সে ধরনের ফান্ড থাকা দরকার, সেগুলো খুবই অপ্রতুল।'
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সবগুলো বিভাগে এখনও গবেষণাগার নেই। বিজ্ঞান বিভাগের গবেষণাগার থাকলে নেই পর্যাপ্ত উপকরণ। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য একটি গবেষণাগার থাকলেও তা একটি রুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যেখানে শুধু একটি পরিচালকের পদ থাকলেও নেই অন্য কোনো কর্মচারী। এ কারণে থমকে আছে শিক্ষকদের গবেষণা।
গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'আমাদের শিক্ষক যারা আছেন তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। এই সীমিত পরিসরের ভেতরেই তারা রিসার্চের জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা যদি উপযুক্ত পরিবেশ পেতাম, তাহলে আমার মনে হয় আমাদের কাছ থেকে জাতি আরও বেশি উপকৃত হতো।'
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, গবেষণার জন্য নেই পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ। যা পাওয়া যায় তা অতি সামান্য। একইসাথে প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং গবেষণা বান্ধব পরিবেশ তৈরি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মো. মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'আইসিটি মন্ত্রণালয়ে আমরা বারবার নক করছি যেন শিক্ষকদের গবেষণাটা আমরা পর্যাপ্ত আকারে করতে পারি। সেজন্য সে বরাদ্দ এবং সে লক্ষ্যে তাদের সহযোগিতা আমরা চেয়েছি। তারা হয়তো সে বিষয়ে নজর দিবেন এবং আমরা পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাবো।'
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০০ জন শিক্ষার্থী দিয়ে প্রথম ব্যাচে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৯ হাজার ৩০০ জন। আর এর বিপরীতে ২৫টি বিভাগে শিক্ষক রয়েছে মাত্র ২১০ জন।