তামাক ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহারে বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। ২০১৮ সালের তামাকজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতায় অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। যা ওই বছর জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
দেশে তরুণদের মধ্যে তামাক নেয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে ধরা হয় সিগারেট। যদিও ২০২৪-২৫ এর বাজেটে দেখা যায় নিম্নস্তরের সিগারেটের সহজলভ্যতা সামান্য কমলেও বাকি তিনস্তরের সিগারেট আগের চেয়ে অনেকটা সহজলভ্য হয়েছে।
দেশে দিন দিন বাড়ছে হৃদ্রোগ, ক্যান্সার, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগ ও ডায়াবেটিস। এর অন্যতম কারণ তামাক পণ্যের ব্যবহার বলে জানালেন এই গবেষক।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরি বলেন, ‘মানুষ মারা যাচ্ছে অসংক্রামক রোগের কারণে এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মারা যাচ্ছে হৃদ্রোগে। কেউ যদি ১৪ বছর থেকে রেগুলার ধূমপান করে খুব সহজেই ৪০ বছর বয়সে সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হবে।’
নিকোটিনের সঙ্গে বিভিন্ন ফলের ফ্লেভার মিশিয়ে তৈরি করা হয় ই-সিগারেটের উপাদান পানীয় তামাক। এই নানা স্বাদের পানীয় তামাকে অনেকে সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছেন ক্ষতিকর ই-সিগারেটে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে ই-সিগারেট গ্রহণের হার।
গেল ৫ বছরে ই-সিগারেট বিশ্ব বাজারে ৬.৯ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৩ বিলিয়ন ডলার। সাধারণত ই-সিগারেট গ্রহণকারীরা ধূমপানও করে থাকেন। যে কারণে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি, বাড়ছে হার্ট অ্যাটাক।
গবেষকরা বলছেন সাম্প্রতিক সময়ে নানা কূটকৌশলের পথ বেছে নিয়েছে তামাক কোম্পানি। যে কারণে শিশুরাও তামাকে আকৃষ্ট হচ্ছে।
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের বাংলাদেশের এডভোকেসি ম্যানেজার মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের বেশিরভাগ জায়গায় খেলার মাঠের আশে পাশে তামাক পণ্যের দোকান রয়েছে। তারা এমনভাবে রাখে যেন শিশুরাও আকৃষ্ট হয়।’
পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও মাটির গুণাগুণের ক্ষতির বিষয়টি জেনেও তামাক চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। দীর্ঘদিন ধরে তামাক চাষ করায় নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরতা, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এই গবেষক বলছেন সিগারেটের ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমাতে এর দাম ব্যাপকভাবে বাড়ানো দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, ‘টোবাকো কোম্পানি যে কিনবেই এইটা কিন্তু নির্ধারিত। অন্যান্য কৃষি ফসলে কিন্তু এই দাম নির্ধারণ থাকে না। এ কারণে তারা তামাকের চাষের দিকে মনোযোগী হয়।’
কঠোর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে তামাকের ব্যবহার হ্রাস বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পদ্ধতি। তাই শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনই পারে এর ব্যবহার কমিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে।