দেশের যেকোনো সংকটে ন্যায়বিচারের দাবিতে সবসময় সোচ্চার থেকেছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে তোফাজ্জলের মৃত্যুতে স্তম্ভিত পুরো দেশ।
৫ আগস্টের পর যখন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন সবার চোখে, তখন কী বার্তা দেয় এমন মৃত্যু?
শিক্ষক, লেখক ও গবেষক রাশেদা রওনক খান বলেন, 'বিভিন্ন ধরনের শত্রু থাকতে পারে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, রাষ্ট্রের আইনের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা না রেখে তার ওপর প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাকে মেরে ফেলা। এর চেয়ে জঘন্যতম অপরাধ তো আর কিছু হতে পারে না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে তো এটা আশা করাই যায় না। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হত্যাকারী এটা শুনতেও কারো ভালো লাগছে না তো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো আমাদের সবার কাছে একটা সম্মানের জায়গা, ঠিক একইভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও।'
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, গণপিটুনিতে হত্যার এসব ঘটনা মর্মান্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। কোনো সভ্য সমাজে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, 'মর্মান্তিক দু'টি ঘটনা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত। যারা এটা ঘটিয়েছে আমার বিশ্বাস তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের রিপ্রেজেন্টস করে না। তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। আইন নিজের হাতে তোলার কোনো সুযোগ নেই। নিজের হাতে আইন তুলে নেয়ার কালচার থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে।'
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, 'যারা করেছে তাদের অতি দ্রুত হত্যা মামলার আসামি করা উচিত। গ্রেপ্তার এবং বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। এবং এই বিচার অতি দ্রুত করা উচিত, যেন সকলের জন্য একটা দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ে থাকে।'
অতীতে রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নতুন বাংলাদেশে এমন ঘটনা কোনোভাবে কাম্য নয়। এর পুনরাবৃত্তি বন্ধে জড়িতদের দ্রুত সময়ে বিচারের আওতায় এনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
শিশির মনির বলেন, 'আবার সেই অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, গায়েবি মামলার আসামি যদি করা হয় মানুষকে, তাহলে মানুষের মানবাধিকার ভূলণ্ঠিত হবে। এতে নতুন বাংলাদেশের কনসেপ্ট মুখ থুবড়ে পড়বে। এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যেন এই ধরনের ঘটনা একটিও ঘটতে না পারে। আর যদি ঘটেও কোনোটা, তড়িৎগতিতে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। এবং বিচারটাও যে দীর্ঘসূত্রিতায় না হয়, সেটাও খেয়াল করা উচিত। যেন মানুষ বুঝতে পারে নতুন বাংলাদেশ আসলেই নতুন।'
ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রোপারলি ইনভেস্টটিগেট করা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইনকোয়ারি কমিটি যেটা গঠন করেছে, তারাও এটা গভীরভাবে তদন্ত করবে। দিনশেষে যারা দোষী তারা বেরিয়ে আসবে।'
তিনি আরও বলেন, 'সমন্বয়করা এটাকে দারুণভাবে নিন্দা করেছে। তাদের রিঅ্যাকশন এক্সপোজ করেছে ফেসবুকে। অন্যান্য সংগঠনও এটাকে নিন্দা করছে, এটা একটা ভালো লক্ষণ।'
হঠাৎ করেই একের পর এক গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনার পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে বলে অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তারেক রেজার। তিনি বলেন, 'এই যে মবক্রেসি চলছে, তার মধ্যে অন্যতম বড় ইন্ধনদাতা হচ্ছে এই ফ্যাসিস্টের যেই অংশ বাংলাদেশে এখন রয়ে গেছে। এই আওয়ামী লীগের দোসর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এটা কনসার্নে নিয়েছে। ৫ আগস্ট দিবাগত রাত থেকেই এই মব জাস্টিস বা মব ক্রাইম বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে এসেছে। নিরপরাধ যেন শাস্তি না পায় এবং অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী যেন সেটাকে বিচার করা হয়।'
এই চক্রকে প্রতিহতে ব্যর্থ হলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন অধরাই থাকবে মনে করেন তিনি।