দেশে এখন
0

'তরুণ প্রজন্মের হাতে বাংলাদেশের নতুন সূচনা দেখতে চায় মানুষ'

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের এক মাস পূর্তিতে শহীদদের স্মরণ করা হলো শহীদি মার্চের মধ্য দিয়ে। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম জানান, বাংলাদেশের মানুষ তরুণ প্রজন্মের হাতে নতুন বাংলাদেশের নতুন সূচনা দেখতে চায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদি মার্চে অংশ নেন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। হাতে জাতীয় পতাকা আর কণ্ঠে স্লোগান নিয়ে স্বৈরাচার পতনের দিনটিতে এই পদযাত্রা হয়। পদযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব, মানিকমিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।

ক্যালেন্ডারের পাতায় বছর ঘুরলেই আসে ৫ সেপ্টেম্বর। তবে, আজকের ৫ সেপ্টেম্বর একেবারেই অন্যরকম। ভালোবাসার, আনন্দের, বিজয়ের, স্বপ্নের, আবার সহযাত্রী হারানোর বেদনার।

বেলা তিনটা বাজতেই পূর্ণ হতে থাকে ঢাকার রাজপথ। চোখের দৃষ্টির বাহিরে এ জনস্রোত। হাতে লাল-সবুজের পতাকা, কণ্ঠে নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ শাসনের পতনের এক মাস পূর্তিতে এই পদযাত্রা ছাত্র জনতারা। আবেগ, উচ্ছ্বস আর স্লোগানে জুলাই আগষ্টের নারকীয় হত্যাকান্ডের স্মৃতিচারন করছে ছাত্র জনতা।

পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের একজন বলেন, 'প্রথম কারফিউয়ের সময় শুক্রবারে আমি ছাত্রদের কোমলপানি খাওয়াচ্ছিলাম। আর শনিবারের দিন আমি মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। যোহরের নামাজ পড়ে আমি যখন বাসার কাছে আসছিলাম বনশ্রীতে তখন অতর্কিতভাবে দূরে থেকে গুলি করে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয় শহিদী মিছিল। এরপর পায়ে হেটে নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাব, কলাবাগান হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে যায় ছাত্র জনতা । পরবর্তীতে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার হয়ে শাহবাগ পার করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় স্বৈরাচার পতনের এক মাস পূর্তির শহীদি মিছিল।

স্মৃতির এ মিছিলে যোগ দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ, রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, কারিগরি, মাদ্রাসা ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা। ছিলো সব শ্রেণী পেশার সাধারণ মানুষের সঃস্তফূর্ত অংশগ্রহন।

মার্চে অংশ নেয়া একজন অবিভাবক বলেন, 'ছাত্রদের আজকে শহীদি মার্চে অংশগ্রহণ করে এই গণঅভ্যুত্থানে যেসমস্ত ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজকে আমি এখানে এসেছি।'

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন ফ্যাসিবাদের দোসরদের বার্তা দিতেই এই পদযাত্রার আয়োজন। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রতিহত করার কথাও জানায় তারা।

সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, 'যারা ভেবেছিল আমাদের জাতীয় ঐক্য নষ্ট হয়েছে, আজকে শহীদি মার্চের মধ্যে দিয়ে ৫ আগস্টের পূনরায় মঞ্চায়ন হয়েছে আজকে ৫ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ যারা দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্তদের কাছে এটি একটি বার্তা যে, তারা যেন আর কখনোই দুর্নীতিতে পুনর্বাসিত না হয়।'

সমন্বয়ক আখতার বলেন, 'হাসিনা পালিয়ে গেছে, ফ্যাসিবাদের অনেক কিছু এখানে আছে এখনও। কিন্তু ছাত্ররা রাজপথে আছে, ফ্যাসিবাদের শেষ চিহ্নটুকু পর্যন্ত ছাত্ররা নিশ্চিহ্ন করবে।'

অন্য এক সমন্বয়ক বলেন, 'তারা এদেশের মানুসের আবেগ নিয়ে আর একবার খেলতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ছাত্র-জনতার এই লড়াই চলবে। আমরা ৫ আগস্ট দখলবাজি, টেন্ডারবাজি এবং অস্ত্রের রাজনীতির কবর দিয়েছি। এই রাজনীতি আর কখনোই ফিরে আসবে না আমরা সেই বার্তা দিতে চাই।'

সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, 'বাংলাদেশের প্রতটি ধর্মের, বর্ণের, পেশার মানুষ আজকে রাজপথে নেমে এসেছে। কারণ তারা এই স্বৈরাচারী বা ফ্যাসিবাদী শাসনের যে অভ্যস্ততা, তা থেকে বের হয়ে আসতে চায়। তারা তরুণ প্রজন্মের হাতে নতুন বাংলাদেশের নতুন সূচনা দেখতে চায়।'

শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে না দেবার কথা বলার সাথে হাসিনা সরকার পতনের মধ্যে দিয়ে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে সেটি যেকোনো মূল্যে ধরে রাখার কথা বলছেন ছাত্রজনতা।

এসএস