দেশে এখন
0

সাম্প্রতিক আন্দোলনে শিক্ষার্থী ছাড়াও সোচ্চার ছিল সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে হয় গণঅভ্যুত্থান। অধিকার আদায়ে শিক্ষার্থী ছাড়াও সোচ্চার ছিল সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। যার বড় উদাহরণ ছিল যাত্রাবাড়ি এলাকা। সেখানে দিনমজুর, রিকশাচালক কিংবা ফুটপাতের মানুষেরও রক্ত ঝরে।

টানা কয়েকদিনের লড়াই শেষে উৎকণ্ঠা আর অধিকার ফিরে পাওয়ার দিন ৫ আগস্ট। এই দিন সকালটা ছিল কালো মেঘে ঢাকা। দুপুরের রোদে কেটে যায় দুর্যোগের ঘনঘটা। বিকেলটা শুধুই ছাত্রজনতার।

এর মধ্যে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে শুরু হয়, সারাদেশে আনন্দ মিছিল। ঘর ছেড়ে তখন রাজপথে লাখো মানুষ। গণভবন, সংসদ ভবন সব ছিল মুক্তিকামী মানুষের দখলে। তবে, তখনও মুক্তি পায়নি যাত্রাবাড়ি এলাকার ছাত্রজনতা।

শনির আখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল এলাকার মানুষ তখনও ছোটাছুটিতে ব্যস্ত। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে মুহুর্মুহু গোলাগুলি। সে সময় আনন্দমিছিলে যোগ দিতে গিয়ে কারও কারও জীবন প্রদীপ থেমে যায় ঘাতকের গুলির মুখে।

তাদের মধ্যে একজন ওবায়দুল ইসলাম। যিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। স্বামী হারিয়ে দিশেহারা মরিয়ম বেগম।

তিনি বলেন, 'তার মৃত্যুর কথা শুনে আমি বসে থাকা থেকে দাঁড়িয়ে যাই, তারপর পড়ে যাই মাটিতে। প্রতিটা সময়ে তার কথা মনে পরে। আমার মেয়েদের এই বয়সে বাবাহারা হয়েছে। আমি স্বামীহারা হয়েছি। আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই আমি।'

দুই সন্তানের জনক ওবায়দুল ছিল সন্তানের প্রিয়। বাবার হত্যার বিচারের দাবি সন্তানদের।

ওবায়দুলের বড় মেয়ে বলেন, 'আমার বাবার মতো আর একজনও নাই আশেপাশে। আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি তার মতো আর কোনো মানুষ দেখিনি। আমাদের অল্প বয়সে এতিম করে রেখে গেলো। বাবা যে এভাবে মারা যাবে কখনও ভাবিনি।'

একই এলাকার আরিফ গর্ভবতী স্ত্রী আর মায়ের জন্য ভাতের টাকা জোগাড় করতে বের হয় রিকশা নিয়ে। তবে, আর ফেরা হয়নি তার। মায়েরও মুখে উঠেনি আহার। ছেলের ছবি নিয়ে কাটে সারাদিন। পাগলপ্রায় মায়ের আহাজারি আর বেদনার সাক্ষী যেন নিষ্প্রাণ ছবি আর অশ্রুজল।

আরিফের মা বলেন, 'আমার একটা ছেলেকে মেরে ফেললো, এখন আমাদের কী হবে। এর বিচার চাই আমরা। আমরা তো এখন অসহায় হয়ে গেছি। আমার তো আর কেউ নাই। ছেলে কামাই করে নিয়ে আসলে আমরা খাবার পেতাম। এখন তো না খেয়ে থাকতে হবে।'

আরিফের মৃত্যুর কয়দিন পরই পৃথিবীতে আসে তার ছেলে। যে এখনও জানে না তার রক্তে বইছে আত্মত্যাগের ইতিহাস।

মাতুয়াইল থেকে শনির আখড়া সিএনজি স্টেশনে আসলে দেখা মিলবে বিভীষিকাময় দিনগুলোর কিছু স্মৃতিচিহ্ন। ফুটপাতে বন্ধ দোকানের ব্যবসায়ী ওয়াসিম প্রাণ হারায় পুলিশের গুলিতে।

স্থানীয় একজন বলেন, 'উনি যে মারা গেছে, এটা আমরা তখনও জানি না। কিন্তু কে মারা গেছে এটা আমাদের দেখার আগ্রহ ছিল। তাই আমরা দেখতে গিয়ে দেখি উনি মারা গেছে। পুলিশ, পুলিশের সাথে ছাত্রলীগসহ যুবলীগ মিলে একসাথে হামলা করেছে।'

আরিফ, ওয়াসিমদের মতো শ্রমজীবীদের আত্মত্যাগ এনে দিয়েছে নতুন বাংলাদেশ। যেখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি কাটিয়ে নতুন দিন হবে দেশমাতৃকার।

tech