দেশে এখন
0

রাসেল'স ভাইপারের চেয়েও বিষধর সাপ বাংলাদেশে আছে

রাসেল'স ভাইপারের আতঙ্ক বেড়েছে জনমনে। নদীর আশপাশে ৩৩ জেলায় দেখা মিলেছে এই সাপের। দংশনে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু যেখানে প্রতি বছর সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় কোবরা ও কেউটে সাপের কামড়ে সেখানে রাসেল'স ভাইপার নিয়ে এতো ভয় ও উদ্বেগের কারণ কী?

দেশজুড়ে নতুন আতঙ্ক রাসেল'স ভাইপার। দেশে এক সময়ে বিলুপ্ত ঘোষণা করা এই সাপ ফিরে আসে ২০০৯ সালে। এরপর ধীরে ধীরে পদ্মা যমুনা হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ৩৩ জেলায়। জায়গা করে নিয়েছে শহর কিংবা গ্রামের টং দোকান থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার আলোচনায়।

ঢাকার কাছেই মানিকগঞ্জের কিছু এলাকায় গত তিন মাসে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরপর থেকেই বাড়ে আতঙ্ক। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চল ও কৃষি কাজের সাথে জড়িতদের এই সাপ নিয়ে ভীত হতে দেখা যায়। কিন্তু রাসেলস ভাইপার কতটা বিষাক্ত সাপ?

সাপ ও সরীসৃপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রমন বলেন, 'রাসেলস ভাইপারের বিষের তীব্রতা খুব বেশি শক্তিশালী না। এর চেয়েও তীব্র বিষধর সাপ বাংলাদেশে আছে। যেমন গোখরা সাপ।'

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে চার লাখ সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার মানুষ মারা গেছেন, যাদের বেশিরভাগই কোবরা ও কেউটে প্রজাতি সাপের কামড়ে। তবে সময়মতো চিকিৎসা না পেলে রাসেলস ভাইপারের কামড়েও মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

তবে এবার প্রশ্ন কোবরা ও কেউটে সাপের থেকে কেন এই প্রজাতির সাপ নিয়ে এতো চর্চা?

বোরহান বিশ্বাস রমন আরও বলেন, 'অন্যান্য সাপের ক্ষেত্রে এক-দুই ডোজ অ্যান্টিভেনম দিলে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু এই সাপের ক্ষেত্রে চার ডোজ পর্যন্ত অ্যান্টিভেনম দেওয়া লাগে।'

রাসেল'স ভাইপার বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া নামে পরিচিত। শরীরের বিভিন্ন স্থানে চন্দ্রাকৃতি ছোপ ছোপ গোল দাগের জন্য এ ধরনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে।

দেশের বিষধর সাপের এক থেকে তিনের মধ্যে রাসেলস ভাইপার না থাকলেও ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত এই সাপ দীর্ঘ বিষদাঁতের অধিকারী, বিশ্বে যার স্থান দ্বিতীয়। তবে এই সাপের ভয়ংকর দিক এর দ্রুততা। আক্রমণের গতি এতটাই তীব্র যে এক সেকেন্ডের ১৬ ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে ছোবল শেষ করতে পারে।

ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেস্কিউ টিমের প্রচার সম্পাদক নাহিদ আল জুবায়ের বলেন, 'এক সেকেন্ডের ১৬ ভাগের এক ভাগ সময়ে রাসেল ভাইপার কামড় দেয় এটা সত্য। তবে সে তেড়ে এসে কখনো কামড়াবে না। তাকে বিরক্ত না করলে কখনো ছোবল দেয় না।'

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতঙ্কিত না হয়ে কিছু ব্যবস্থা নিলেই বাঁচা সম্ভব সব ধরনের সাপের ছোবল থেকে। বিশেষ করে যারা গ্রামে খেতে খামারে কাজ করেন তাদের নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। এমনকি পুকুরে বা জলাশয়ে মাছ শিকারের সময়ও দিতে হবে বাড়তি নজর।

দেশের সব উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে সরকারিভাবে বিনা খরচে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। তাই সাপে কাটলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিতে হবে হাসপাতালে।

বিএসএমএমইউ'র ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, 'হাতে বা পায়ে কামড় দিলে জায়গাটা স্থির রাখতে হবে। নাড়াচাড়া যত কম করা যায় ততই ভালো। প্রয়োজনে বেঁধে দিতে হবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।'

আতঙ্কিত হয়ে রাসেল ভাইপার ভেবে অনেক উপকারী সাপ মেরে ফেললে, তা পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। তাই সবাইকে সচেতন হওয়ার তাগিদ তাদের বিশেষজ্ঞদের।