শ্রীমঙ্গলের বাড়াওরা চা বাগানের পঞ্চাশোর্ধ্ব জয়মনি হাজরা ভোটের হিসেব নিকেষে একদম কাঁচা । তবে তিনি এটা বোঝেন ভোটে তাকে একজন প্রার্থী প্রতিবারের মতো এবারো বেছে নিতে হবে। কিন্তু কাকে বেছে নিবেন তিনি । এমন প্রশ্নে এই চা কন্যা তার বেদনাবিধুর অপ্রকাশিত গল্পের কথা শোনালেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা নেতা বানিয়ে দেওয়ার পর তারা ১২ তলার উপরে থাকে। আর আমরা শরীরের রক্ত পানি করি।'
মৌলভীবাজার জেলায় এই চা শ্রমিকরাই ভোটের মাঠে প্রার্থীর বিজয়ের অন্যতম নিয়ামক। জেলায় শুধু চা শ্রমিক ভোটারই রয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি যা মোট ভোটের ১১ শতাংশ । প্রত্যেক ভোটারেরই একই অভিযোগ বাংলাদেশের অন্য সব নাগরিকরা যে সকল সুযোগ সুবিধা পায় তা থেকে এখনো বঞ্চিত রয়েছেন তারা । শুধু আশ্বাস নয় এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছ থেকে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে চান তারা।
চা শ্রমিকরা বলেন, ‘আমরা তো নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারিনা। ভোট দিয়ে তো আমাদের কোন লাভ হয়না। স্বাস্থ্য,পড়ালেখার ক্ষেত্রেও কোন সুবিধা নাই।'
তবে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর থেকে কিছুটা ভালো অবস্থানে খাসিয়া সম্প্রদায়। জেলাটির ৭৫টি পুঞ্জিতে প্রায় ২৫ হাজার খাসিয়া বসবাস করেন যাদের মধ্যে ভোটার আছেন প্রায় দশমিক আট পাঁচ শতাংশ।
রাষ্ট্রের নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে পিছিয়ে থাকার কারণে পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় বেশ বেগ পোহাতে হয় খাসিয়াদের। সরকার তাদের দিকে সুদৃষ্টি দিলে শুধু স্থানীয়ভাবে নয় বরং দেশের অর্থনীতির মূল আয়েরও বড় অংশীদার হতে পারবে তারা।
মাগুরছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন, ‘রাষ্ট্র যদি আমাদের দিকে নজর দিত তাহলে আমাদের উৎপাদিত পণ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারতাম।'
ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে মনিপুরী সম্প্রদায় । যার বিশাল একটি অংশের বসবাস মৌলভীবাজার জেলায়। এখানে প্রায় ২ লাখ মনিপুরী জনগোষ্ঠীর ৬৫ হাজারই ভোটার যা মোট ভোটের ৪ শতাংশ । ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে মনিপুরী তাঁত ও নানা হস্তশিল্পের সম্ভাবনা থাকলেও এখনো অর্জন হয়নি তাদের কাঙ্ক্ষিত সফলতা ।
মনিপুরীরা বলেন, ‘আগামীতে সরকার হস্তশিল্পের উন্নতিকরণের মধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করলে আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারবো।'
প্রাকৃতিক সম্পদে স্বয়ং সম্পূর্ণ জেলাটিতে শুধুমাত্র চা-শিল্প ছাড়া স্বাধীনতার এত বছর পরেও আর কোন শিল্প গড়ে ওঠেনি । তাই এবারের নির্বাচনে এখানকার ভোটাররা বলছেন- এই অঞ্চলে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠায় কাজ করবেন এমন প্রার্থীকেই নির্বাচিত করতে চান তারা।