কয়েকমাস ধরে মিত্রদের কাছ থেকে কোনো সহয়তা না পাওয়ায় লড়াইয়ের ময়দানে ধুঁকছিল ইউক্রেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশটিতে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় রুশ বাহিনী। এ অবস্থায় নতুন নতুন অঞ্চল দখলের পথে মস্কোর একের পর এক হামলা কিয়েভের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চিন্তায় ফেলে সবচেয়ে বড় মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসেডেন্ট জো বাইডেনকেও। কারণ ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে তিক্ততায় তার দেয়া প্রতিশ্রুতির কোনো সহায়তা বিলই পাস হচ্ছিলো না। অবশেষে শনিবার (২০ এপ্রিল) কংগ্রেসে সাড়ে নয় হাজার কোটি ডলারের সহায়তা বিল পাস হওয়ার পর মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিলটির অনুমোদন দিলো সিনেটররা। আজ (বুধবার) প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিলটিতে স্বাক্ষর করে আইনে পরিণত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আওতায় থাকা সাড়ে নয় হাজার কোটি ডলারের মধ্যে ইউক্রেনের জন্য থাকছে ৬ হাজার ১০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা। আর ইসরাইলকে দেয়া হবে ২ হাজার ৬শ' কোটি ডলারের সহায়তা। এছাড়া চীনের সঙ্গে উত্তেজনা মোকাবিলার অংশ হিসেবে তাইওয়ানসহ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৮শ' কোটি ডলার। এমনকি ইউক্রেন, ইসরাইল ও গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ৯শ' কোটি ডলার। সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শ্যুমার বলেছেন, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকা সত্ত্বেও আমাদের দ্বিদলীয় মনোভাব হাত মেলানোর কারণে এই বড় ও কঠিন বিলটি পাস করানো সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বের গণতন্ত্র এবং আমাদের জীবনযাত্রাকে রক্ষা করার জন্য যা করা দরকার তাই করবো। কয়েক দশক ধরে সেনেটের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর মধ্যে এটি একটি। সম্ভবত কংগ্রেসের ভেতরে-বাইরের অনেকেই এই সহায়তা প্যাকেজটি ব্যর্থ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু যারা গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়িয়েছে আজ তারা জয়ী হচ্ছে।'
সিনেটে বিলটি অনুমোদন পেলেও বেশ কয়কজন রিপাবলিকান নেতা এখনও এর বিরোধীতা করছেন। বলছেন, জনগণের কথা না ভেবে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ইউক্রেনে কয়েক বিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাঠানো কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না। এসবের জন্য আমেরিকানরা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি করেননি।
রিপাবলিকান নেতা ও সিনেটর টমি টিউবারভিল এ বিষয়ে বলেন, আমরা এসব কাজ আমেরিকানদের মুখে চড় মারার সমান। অথচ তারা তাদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আমাদের এখানে পাঠিয়েছে। সীমান্ত বন্ধ এবং অর্থনীতি ঠিক করার জন্য আইন নিয়ে বিতর্ক করার পরিবর্তে, আমরা সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে বিলিয়ন ডলার পাঠাতে চলেছি। যুদ্ধের কারণে বিশ্বে অচলাবস্থা মধ্যে ইউক্রেনের কোষাগারে আরও অর্থ ঢালা মানে সংঘর্ষকে দীর্ঘায়িত করা এবং আরও প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটা।
কিন্তু ডেমোক্র্যাট নেতারা বলছেন, স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে পশ্চিমা গণতন্ত্র। এই মুহূর্তের ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের উত্তেজনা অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। আর এতে স্বৈরাচাররা এগিয়ে থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।