কোভিডের রেশ কাটতে না কাটতেই হাজির মাঙ্কিপক্স নামের এক নতুন আতঙ্ক। গুটিবসন্তের তুলনায় কম ক্ষতিকারক হলেও মাঙ্কিপক্স ছড়ায় আরও দ্রুত গতিতে। শুরুতে প্রাণি থেকে মানুষের শরীরে এলেও এখন মানুষ থেকে মানুষের শরীরে ছড়াচ্ছে রোগটি।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ফুলে যাওয়া, পিঠে ও পেশিতে ব্যথা ইত্যাদি মাঙ্কি বা এম পক্সের প্রাথমিক লক্ষণ। জ্বরের সাথে সাথে শরীরের নানা স্থানে দেখা দিতে পারে ফুসকুড়ি। প্রথমে মুখ, মুখ থেকে হাত ও হাতের তালু, এরপর পা ও শরীরের অন্যান্য স্থানে এই ফুসকুড়ি ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে, সংক্রমণের ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পরে একা একাই ভালো হয়ে যাচ্ছেন অনেক রোগী। যদিও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য মারাত্মক হতে পারে এমপক্স।
মাঙ্কি পক্সের দু'টি ভ্যারিয়েন্ট- ক্লেড ওয়ান ও ক্লেড টু এর মধ্যে ক্লেড ওয়ান বেশি মাত্রায় সংক্রমিত হয়। তবে, বিশেষজ্ঞদের মাথা ব্যথার কারণ ক্লেড ওয়ান বি- নামের নতুন ভ্যারিয়েন্ট। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি এম পক্সের নতুন ভ্যারিয়েন্ট প্রাণঘাতি হতে পারে আশঙ্কা করছেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা। আফ্রিকার পর সম্প্রতি সুইডেনে এক ব্যক্তির শরীরে পাওয়া গেছে মাঙ্কিপক্সের এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট।
মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সুইডেনের পাবলিক হেলথ এজেন্সির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ম্যাগনাস গিসলেন বলেন, 'এমপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির কোথা থেকে এসেছেন, এরপর কোথায় যাচ্ছেন- এগুলো নজরে রাখতে হবে। এতে করে রোগের সংক্রমণ কমানো যাবে। আক্রান্ত রোগীকে আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিনে নিতে পারলে 'দ্বিতীয় ধাপে' সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং-এ গুরুত্ব দেয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন'।
এদিকে, ডেনমার্কে গুটি বসস্ত ও এমপক্সের ভ্যাক্সিন তৈরির কাজ শুরু করেছে বায়োটেক জায়ান্ট হিসেবে পরিচিত ব্যাভারিয়ান নর্ডিক। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর, শুক্রবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৫ শতাংশ হারে। শুরুতে আফ্রিকায় এই ভ্যাক্সিনের ট্রায়াল শুরু করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
জার্মানির আরেক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ লিফ এরিক স্যান্ডার বলেন, 'একটি ক্যাম্পেইনের আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠির কাছে ভ্যাক্সিন পৌঁছে দিতে হবে। ভ্যাক্সিনের যে কোনো স্বল্পতা নেই তা এরই মধ্যে পরিষ্কার হয়েছে। এই মুহূর্তে আফ্রিকায় এই ভ্যাক্সিনের প্রয়োজনীতা সবচেয়ে বেশি। যে সব অঞ্চলে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে সেখানে ভ্যাক্সিনের চাহিদাও অনেক। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ভ্যাক্সিন পাঠানোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য সংস্থার এগিয়ে আসা উচিত'।
এই মুহূর্তে আফ্রিকায় পরিমাণ ভ্যাক্সিন প্রয়োজন তা জোগাড় করার সামর্থ্য নেই দেশটির। মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো এগিয়ে না আসলে মহামারির প্রকোপ থেকে আফ্রিকা-ইউরোপ-এশিয়ার দেশগুলোকে রক্ষা করা কঠিন হবে। কোভিড থেকে শিক্ষা নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ভ্যাক্সিন বণ্টন ও অর্থনৈতিক সহায়তা পাঠানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।