বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই ফ্যাশন ইভেন্টের আসর মানেই সুন্দর পোশাকের সমারোহ। তবে কখনো কখনো অদ্ভুত সব ফ্যাশনের এক জমকালো আসর হয়ে ওঠে মেট গালা। সাইন্সফিকশন লেখক জে জি বেলার্ডের ‘দ্য গার্ডেন অব টাইম’ গল্প অবলম্বনে এবারের পোশাকের থিম কোড নির্বাচন করা হয়। সেই অনুযায়ী লালের বদলে সবুজ গালিচায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাকে হেঁটেছেন তারকারা। ২০২৪ সালের বিষয় “স্লিপিং বিউটি: রিঅ্যাওয়েকেনিং ফ্যাশন”।
এবারের মেট গালায় প্রথমবারের মতো হাজির হয়েছিলেন টেক জায়ান্ট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের হবু স্ত্রী ও সাবেক টিভি সাংবাদিক লরেন সানচেজ। পরেছিলেন কালো ভেলভেটের বল গাউন। চোখধাঁধানো এই গাউনটি তৈরি করা হয়েছে ভাঙা কাচের টুকরা দিয়ে। হার্ট নেকলাইনের কাঁধ খোলা গাউনের নিচের অংশটিতে ছিল ভাঙা কাচের টুকরার এমবেলিশমেন্ট।
বেনিটো আন্তোনিও মার্টিনেজ ওকাসিও যিনি পরিচিত ব্যাড বানি নামে। পুয়ের্তো রিকোর এই র্যাপার, গায়ক এবং রেকর্ড প্রযোজক এসেছিলেন ম্যাসন মার্জিয়েলা ব্র্যান্ডের পোশাকে। হাতে ছিল কালো রঙের ফুল।
প্রায় ১০ বছর ধরে মেট গালায় আসছেন কেন্ডল জেনার। তাঁর ফ্যাশনেবল উপস্থিতি প্রতিবারই মুগ্ধ করছে সবাইকে। গ্ল্যামারস এই পার্টিতে আমন্ত্রিত বেশির ভাগ অতিথি থিমের সাথে মিল রেখে ড্রেসকোড মেনে পোশাক পরে এসেছিলেন। আবার কেউ কেউ মানেননি। ড্রেসকোড না মানার তালিকায় আছেন হালের অন্যতম জনপ্রিয় মডেল ও ট্রেন্ডসেটার কেন্ডল জেনার।
কেন্ডলের অত্যন্ত পছন্দের ফ্যাশন ডিজাইনার প্রয়াত আলেক্সজান্ডার ম্যাককুইন। ব্রিটিশ এই ফ্যাশন ডিজাইনার গত হয়েছেন প্রায় ১৪ বছর হতে চলেছে। তাঁর অবিক্রীত ভিন্টেজ পোশাকগুলো বিভিন্ন জায়গায় আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। এবারের মেট গালায় কেন্ডল তাই ম্যাককুইনের ডিজাইন করা কিছু পরতে চাইছিলেন। ম্যাককুইনের ২৫ বছর আগে তৈরি পোশাকে মেট গালায় এসেছিলেন কেন্ডল জেনার।
মেট গালার লালা গালিচায় বলিউড সুইটহার্ট আলিয়া ভাটের উজ্জ্বল উপস্থিতি। বিশ্বের ফ্যাশন মহলে সব্যসাচীর ডিজাইনের পোশাক এখন বেশ সমাদৃত। তাই ফ্যাশন দুনিয়ার সবচেয়ে গ্ল্যামারস নাইট আউটের জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন তার অন্যতম প্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জীর তৈরি পোশাক। সব্যসাচী মুখার্জীর ফুলেল শাড়িতে সবার চোখ জুড়িয়েছেন এই বলিউড ডিভা। ফ্যাশনপ্রেমী ও ভক্তদের একেবারে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সব্যসাচী আলিয়ার জন্য ডিজাইন করেছেন অসাধারণ সুন্দর প্যাস্টেল শেডের মিন্ট গ্রিন শাড়ি। এতে এমবেলিশমেন্ট হিসেবে ব্যবহার হয়েছে ফ্রিঞ্জ, সিকুইন ও রাইনস্টোন। আর এর সঙ্গে থাকা ব্লাউজ তৈরি হয়েছে পান্না, মুক্তা ও ক্রিস্টালসহ নানা উপকরণ। শাড়িটির সঙ্গে আলাদা করে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ২৩ ফুট লম্বা ঝুল। এই একটি শাড়ি ও ব্লাউজ তৈরি করতে ১৬৩ জন কারিগরের সময় লেগেছে ১ হাজার নয়শত পয়ষট্টি ঘন্টা।
এবছর মেট গালার আসরে সবাইকে চমকে দিয়ে প্রথমবারের মতো হাজির হয়েছেন ভারতীয় সেলিব্রিটি ফ্যাশন ও ব্রাইডাল ওয়্যার ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জি। এবারের মেট গালার থিমের সাথে মিল রেখে শার্টের ওপর সব্যসাচী মুখার্জি পরেন নিখুঁত কাজের ফ্লোরাল মোটিফ করা সুতির ডাস্টার কোট। এর সঙ্গে পরেন বেজ রঙের ফরমাল প্যান্ট। আর অনুষঙ্গ হিসেবে বেছে নিয়েছেন তাঁর সংগ্রহের সিগনেচার বেল্ট।
মেট গালার এই আয়োজন কস্টিউম ইনস্টিটিউটের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। ডিজাইনার এবং অতিথিরা এই প্রদর্শনীতে ফ্যাশন এবং পোশাকের নিত্যনতুন আবিষ্কারের সুযোগ পান। জনপ্রতি আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য টিকিটের দাম ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে য ছিল ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। মূলত নিউইয়র্কে অবস্থিত মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট-এর উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রতিবছর এই আয়োজন করা হয়। ইভেন্টের পরও, প্রদর্শনী কয়েক মাস ধরে চলে।