মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘর্ষের চিত্র প্রতিদিনই ভয়াবহ হচ্ছে। বিদ্রোহীদের প্রতিরোধের মুখে কার্যত ভেঙে পড়ছে দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আরাকান আর্মির হামলার কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে পালাচ্ছেন জান্তা বাহিনীর সদস্যরা। একের পর এক সফলতার মুখ দেখছে অপ্রতিরোধ্য আরাকান আর্মি।
কিন্তু এই আরাকান আর্মিদের পরিচয় কী? যারা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে ধরাশায়ী করছে?
ইতিহাস বলছে, মিয়ানমারের আজকের রাখাইন অঞ্চলটি একসময় স্বাধীন আরাকান রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিলো। ১৮ শতকে বার্মিজদের আগ্রাসনে অঞ্চলটি সার্বভৌমত্ব হারায়। এরপর থেকে দশকের পর দশক ধরে চলছে সার্বভৌমত্বের লড়াই।
এক পর্যায়ে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবি তুলে ২০০৯ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত হয় আরাকান আর্মি। ২৬ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এই সশস্ত্র বাহিনীর। বর্তমানে তাদের সেনা সদস্য ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়। আরাকানদের জন্য স্বাধীন - সার্বভৌম রাখাইন রাজ্য ' আরাকান নেশন' গঠনের প্রত্যয় নিয়েই এই সশস্ত্র বাহিনীর উত্থান হয়।
চীন সীমান্তবর্তী কাচিন রাজ্যে গঠিত হয়েছিল এই আরাকান আর্মি। তাদের সহায়তা করে আরেক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কাচিন ইন্ডিপেনডেন্টস আর্মি। সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে নিজেদের শক্তিশালী করার পাশাপাশি ২০১৫ সাল থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনাদের রাখাইন রাজ্য ও পার্শ্ববর্তী চীনে পাঠানো শুরু করে আরাকানরা। পরের তিন বছর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘাত অব্যাহত থাকে।
২০১৯ সালে এসে বিচ্ছিন্ন সংঘাত অবশেষে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। একপর্যায়ে ২০২০ সালের নভেম্বরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয় আরাকান আর্মির। কিন্তু নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের পথ থেকে সরে যায়নি তারা। যার ফলাফল এখন দৃশ্যমান।
২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর আরও ঘনীভূত হয় সংকট। একই বছর আগস্টে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আরাকান সেনাবাহিনীর কমান্ডার - ইন - চীফ স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে - সশস্ত্র বিপ্লবের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হলো, আরাকানের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করা। এতে কোন দর কষাকষি হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না।
এদিকে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি আরেকটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তা হলো - আরকান আর্মি রাখাইন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিলে সেটি রোহিঙ্গা সংকটকে কোন দিকে প্রবাহিত করবে?
এমন প্রশ্নের উত্তরে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন যে - রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা হলে, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হবে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের জন্য ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক, দুই ধরনের পরিস্থিতিই তৈরি হতে পারে।