স্বাস্থ্য
দেশে এখন
0

খেজুর ‌রসে উচ্চ মৃত্যুঝুঁকিসহ আজীবন পঙ্গুত্বের শঙ্কা

এ পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাস ছড়িয়েছে ৩৪ জেলায়

জানুয়ারিতে নিপাহ ভাইরাসে বছরের প্রথম মৃত্যু দেখলো বাংলাদেশ। প্রচার-প্রচারণায় গুরুত্ব না দিয়ে খেজুরের কাঁচা রসপানে বিভিন্ন জেলায় বাড়ছে সংক্রমণ। এতে উচ্চ মৃত্যুঝুঁকির পাশাপাশি আছে আজীবন পঙ্গুত্বের সম্ভাবনা।

শীত মৌসুমে গাছ থেকে কাঁচা খেজুর রস খাওয়ার প্রচলন থাকলেও তা বিষপানের মতো আত্মঘাতী হতে পারে। রাতভর হাড়িতে জমতে থাকা খেজুর রসে বাদুরের লালা মিশে ছড়ায় নিপাহ ভাইরাস। যা থেকে লোভ সামলাতে না পারলে করুন পরিণতি হতে পারে।

সম্প্রতি মানিকগঞ্জে খেজুরের রস খেয়ে নিপাহ সংক্রমণে স্বজন হারিয়ে বাবুলের পরিবার শোকস্তব্ধ। কাঁচা রসপান থেকে নিপাহ সংক্রমিত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে বাবুল হোসেন চিকিৎসাধীন ছিলেন। সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পর হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।

স্বজনরা বলনে, 'জানুয়ারি মাসের প্রথম তারিখে রস খাইসিলো। রাত ১২টা-১টার সময় শরীরে হঠাৎ আতঙ্ক শুরু হয়ে গেছিলো। তখন তাড়াতাড়ি এ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নিয়ে যায়। ডাক্তাররা রিপোর্ট দেখার পর বললো এইটার চিকিৎসা একমাত্র মহাখালী।'   

আক্রান্তের ইতিহাস ঘেটে এলাকা হতে আইইডিসিআর আরও নমুনা সংগ্রহ করেছে। তবে সচেতনতায় এখনো ঘাটতি আছে।

কোন প্রতিষেধক না থাকায় উপসর্গের ভিত্তিতে নিপাহ সংক্রমনের চিকিৎসা হয়। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে সংক্রমন ঘটে মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে ফুসফুসসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে। উচ্চ মৃত্যুঝুঁকির সঙ্গে আজীবন পঙ্গুত্বের সম্ভাবনাও থেকে যায়।

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আরিফুল বাসার বলেন, 'রিপোর্টগুলোতে দেখলাম যে রোগীর ফুসফুস পুরো সাদা হয়ে গেছে। এই রোগে মৃত্যুঝুঁকি কিন্তু ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। এই লাশগুলো কবর দেওয়ার সময়ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেটা আমরা কোভিডের সময় করেছিলাম। এটা কোভিড থেকেও ভয়াবহ। কারণ কোন চিকিৎসা নাই।'

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, আইইডিসিআর থেকে আরও ভয়ঙ্কর তথ্য জানা গেলো। শুধু ফল খাওয়া প্রাণী থেকেই নয়, সংক্রমিত একজন থেকে অন্যজনে নিপাহ ছড়াতে পারে। তাই কাঁচা রস, আধ খাওয়া ফলমূল না খাওয়ার পাশাপাশি আক্রান্তের সংস্পর্শে বাড়তি সতর্কতা মানতে হবে।

আইইডিসিআর এর পরিচালক তাহমিনা শিরীন বলেন, 'নিপাহ আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে যারা এসেছেন আমরা সবাইকে পরীক্ষা করে থাকি। তার বাড়ির লোকজন এবং হাসপাতালের নার্স-ওয়ার্ডবয়সহ যারা সংস্পর্শে আসবে তাদেরকেও টেস্ট করাতে হবে।'

২০০১ সালে মেহেরপুরে প্রথম সনাক্তের পর দেশের ৩৪ জেলায় নিপাহ ছড়িয়েছে। সেই থেকে এ পর্যন্ত সংক্রমিত ৩৪০ জনের মধ্যে ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর