স্থানীয়দের কাছে এটি 'রাজখাল' নামে পরিচিত। একসময় এই খালে মাছ শিকার করতেন এলাকাবাসী। এখন মাছতো দূরের কথা, খালের পানি কুচকুচে কালো। দুর্গন্ধে আশপাশে টেকাই মুশকিল।
স্থানীয়রা জানান, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার হরিতলা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ভারটেকওয়্যার কোম্পানি, পাইয়োনিয়ার ডেনিম ও নাহিদ টেক্সটাইল নামে তিনটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠান তিনটি তাদের উৎপাদিত অপরিশোধিত বর্জ্য ছেড়ে দেয় রাজখালে। এতে খালের পানি হয়ে উঠছে বিষাক্ত। দূষিত পানিতে নেমে মারা যাচ্ছে হাঁস। চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এলাকাবাসী।
এলাকার কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমির সেচের বড় উৎস ছিল এই খাল। সাতপাড়িয়া হাওর, এখতিয়ারপুর হাওর, পিয়াম হাওর ও সাকুসাইল হাওরে বিষাক্ত পানি ঢুকে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। জমি প্রস্তুতে বাড়ছে উৎপাদন খরচ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে কারখানার পক্ষ থেকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হয়। প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহের সময় ঘটনাস্থলে দুই ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে কারখানার পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেন তারা।
রাজখাল ও আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’ এর নেতৃবৃন্দ জানান, দূষণ বন্ধে সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরার সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, ‘এখানকার মানুষ ভবিষ্যতে ক্যানসারে আক্রান্ত হবে। এখানে ক্রোমিয়াম আছে, ক্যাডমিয়াম আছে। এখানকার গবাদি পশু মারা যাচ্চে, হাস-মুরগী মারা যাচ্ছে। এখানে কৃষকের কোনো ফলন নাই, ধানক্ষেতে কোনো ফসল নাই। এটা যে এ অঞ্চলে ও জাতীয়ভাবে বিরুপ প্রভাব ফেলেছে সেটা আমলে নিয়ে সরকারকে এ শিল্প দূষণ বন্ধ করতে হবে।’
সম্প্রতি খাল ও অভিযুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান তিনটি থেকে নির্গত পানির মান পরীক্ষা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। যেখানে খালের পানি অতিরিক্ত মাত্রায় দূষণের প্রমাণ মিলেছে।
সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘খালের পানির যে কোয়ালিটি আমাদের টেস্ট রিপোর্ট অনুযায়ী যেসব লেভেল রয়েছে তার অধিকাংশই সীমার বাইরে।’
এই রাজখাল বলভদ্র নদী হয়ে মিশেছে মেঘনায়। বৃহৎ এলাকাজুড়ে এই দূষণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।