বরিশালের ঐতিহ্যবাহী কীর্তনখোলা নদী। সময়ের বিবর্তনে ‘বাংলার ভেনিস’ খ্যাত কীর্তনখোলার সেই সৌন্দর্য যেন ধুয়ে মুছে গেছে। কীর্তনের উৎসব হারিয়ে এখন নিত্যদূষণের কবলে এই তটিনী।
নদীর পানিতে ভাসছে প্লাস্টিকের বোতল, খাবারের প্যাকেটসহ পলিথিন বর্জ্য। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য আর লঞ্চের ময়লা-আবর্জনা ফেলে কীর্তনখোলার পানিকে করা হচ্ছে বিষাক্ত। যে যেভাবে পারছে ময়লা-আবর্জনা নদীতে ফেলছেন। নদীর ঐতিহ্য এবং বরিশালকে বাঁচিয়ে রাখতে দূষণের হাত থেকে রক্ষার দাবি নগরবাসীর।
নদীরক্ষা কমিটির নেতারা বলছেন, প্রতিনিয়ত পানির মান পরীক্ষার পাশাপাশি নদীর হেলথ কার্ড থাকা দরকার। তার উপর ভিত্তি করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া কারখানাগুলোর ইটিপি সিস্টেম চালু রয়েছে কি-না তা মনিটরিং ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি তাদের।
বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন–সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, ‘প্রতিটি নদীর একটি হেলথ কার্ড দরকার, যদি নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে ঘোষণা করে দেয়া হয়, তাহলে তার স্বাস্থ্য তখন প্রতি নিয়ত পরীক্ষা করতে হবে। আর সেই ফলের ওপর ভিত্তি করেই অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে। নদীর পাড়ে থাকা বাজার ও রেস্তোরাঁগুলোতে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি নজরদারিও করতে হবে।’
মানবসৃষ্ট বর্জ্য কীর্তনখোলা হারিয়ে ফেলছে ঐতিহ্য। পরিবেশ হচ্ছে মারাত্মক হুমকিরও সম্মুখীন। একই সাথে কমছে নদীর নাব্যতা। হারাতে বসেছে গতি প্রবাহ। এমন অবস্থায় সচেতনতা বাড়ানোরসহ সমন্বিত উদ্যোগে কীর্তনখোলা নদীকে বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নদীর চ্যানেলে যখন পলিথিন জাতীয় বর্জ্য প্রবেশ করে তা এক সময় একটা আস্তরণ তৈরি তা সেরিমেন্ট ও ইনফিলট্রেশনের মাধ্যমে পুরো নদীর সিস্টেমটাকে ব্যাহত করে। তাই কীর্তনখোলাকে বাঁচানোর জন্য আমাদের প্রথম পলিথিন বন্ধ করতে হবে।’
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, কীর্তনখোলার আশপাশ ও মহানগরীতে যেসব তরল বর্জ্য সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর ইটিপি সিস্টেম চালু রয়েছে। যা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। আর জেলা প্রশাসক বলছেন, নদী দূষণ রোধে কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শেখ কামাল মেহেদী বলেন, ‘ কঠিন বর্জ্য নীতিমালা যা আসলে গৃহস্থালি বর্জ্য সেটা একত্রে জড়ো করে একটা প্লান্ট তৈরি করার দরকার। নদী-খাল সহ যেসব জায়গায় প্লাস্টিক ফেলা হচ্ছে এটা আমি মনে করি জনসচেতনতা ও সংরক্ষণের অভাব।’
বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ কীর্তনখোলো নদীটা আমরা দূষণ ও দখল মুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। পরিবেশ অধিদপ্তর একটি তালিকা তৈরি করছে, আমরা তাদেরকেও আইনের আওতায় আনবো।’
কীর্তনখোলা নদীর প্রাণস্পন্দন ধরে রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে দখল ও দূষণ রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।