হালিমা বেগম বলেন, ‘গরীব মানুষ, কোনোভাবে টাকা পয়সা এনে বাড়ির কাজ ধরেছিলাম। কিন্তু আর রাখতে পারলাম না।’
পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে গত বুধবার থেকে আখাউড়ায় বন্যা সৃষ্টি হয়। ঢলের পানির তোড়ে ভেঙে যায় আড়িয়াল ও খলাপাড়া এলাকায় থাকা হাওড়া নদীর দু'টি বাঁধ। দুইদিনে প্লাবিত হয় আখাউড়ার বাউতলা, বঙ্গেরচর, কালিকাপুর, খলাপাড়া ও আড়িয়লসহ ৪০টিরও বেশি গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়ে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ।
তবে শুক্রবার থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে থাকে। বাসা-বাড়ি থেকে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে পুরোপুরি পানি না সরায় দুর্ভোগ কমেনি। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাতে। পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর আমন ধানের জমি, ভেসে গেছে অন্তত ১৫ কোটি টাকার মাছ।
দুর্গত এলাকার এক বাসিন্দা ও মাছের খামারি বলেন, ‘রাত্রে অনেক পানি এসেছে। আমি মোট ১৮ লাখ টাকার মাছ ছেড়েছিলাম। খাবার দেয়া হয়েছে ৩০ লাখ টাকার। এখানে আমার অনেক ঋণ আছে। পথে বসা ছাড়া আমার আর উপায় নেই।’
এদিকে, বন্যার পানি সরে গেলেও বন্ধ রয়েছে আখাউড়া স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। আখাউড়া-আগরতলা সড়কের জাজিজা খালের ওপর বেইলি সেতু ভেঙে যাওয়ায় রপ্তানি পণ্যবোঝাই কোনো ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে বন্ধ রয়েছে পণ্য আমদানি-রপ্তানি।
এতে করে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া গত ২১ আগস্ট থেকে বন্ধ রয়েছে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম। ফলে প্রতিদিন যাত্রীদের ভ্রমণ কর বাবদ অন্তত ৪ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
আখাউড়া স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাসিবুল হাসান বলেন, ‘বড় গাড়ি বা যানবাহন আসবে সেরকম কোনো বিকল্প রাস্তাও নেই। আমরা অপেক্ষা করছি এবং যোগাযোগও করেছি যেন রাস্তা দ্রুত ঠিক করা হয়। প্রতিদিনই ৫০-৬০ বা ৮০ হাজার ডলারের মাছ রপ্তানি হতো। সেখান থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে গিয়েছি।’
বন্যার পানি পুরোপুরি সরে গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং ভেঙে যাওয়া বাঁধ ও সেতু মেরামত করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার পাশাপাশি স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
আখাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন রুহি বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকটা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তাদের তালিকা নিব। এরপর সরকারের কাছে ক্ষতির বিষয়ে জানানো হবে। এর প্রেক্ষিতে যে সহায়তা পাওয়া যাবে তা সমানভাবে বণ্টন করে দেয়া হবে।’
আখাউড়া ছাড়াও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভারত সীমান্তবর্তী কসবা উপজেলার কয়েকটি গ্রামেও বন্যা সৃষ্টি হয়েছে।