গেল ২৮ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে মালতিনগর এলাকায় বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখেন ওই বাড়ির দেয়াল ধসে গেছে। এরমধ্যে প্রতিবেশীর ওই বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসনিম বুশরাসহ তিনজন। পরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বুশরা।
একমাত্র মেয়েকে হারানোর দগদগে ক্ষত নিয়ে দোষীদের বিচার চেয়ে এলাকাবাসীর সাথে শনিবার (১১ মে) বগুড়া শহরের সাতমাথায় মানববন্ধন করেন বুশরার হতভাগা বাবা-মা। বিস্ফোরণের পর বাঁচতে চেয়ে বুশরার আকুতি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না মা সালমা খাতুন।
তিনি বলেন, 'ঢাকা মেডিকেলে পাঠানোর কথা হলো। সেখানে পাঁচ রাত থাকার পর আমাদের ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেল।'
অবৈধ কারখানা বন্ধে বগুড়া সাতমাথায় মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। ছবি: এখন টিভি
বুশরার বাবা আলী হোসেন বলেন, 'এই যে অনেক বছর হলো মানুষ মারা যাচ্ছে, এ জিনিসগুলো কি বন্ধ হবে না। এগুলো বন্ধ করে দেওয়া খুব জরুরি।'
এলাকাবাসী বলছেন, পটকা বানাতে গিয়ে এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে মালতিনগরে। ১৯৯৬ সালে পটকা বানাতে গিয়ে শিশুকন্যা, স্ত্রীসহ বিস্ফোরণে মারা যান ওয়াজেদ মিয়া। বছর দুই আগেও একই ঘটনায় প্রাণ হারান শচীন। গেল ২৮ বছরে বুশরাসহ ৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিলো পটকার কারখানা। এখনও এলাকায় গোপনে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে পটকা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আতঙ্কিত এলাকাবাসী।
স্থানীয় একজন বলেন, 'এর থেকেও বেশি কিছু হতে পারে। আমরা চাই এর সঠিক তদন্ত হোক। আগে অনেকে মারা গেছে, ভবিষ্যতে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয় সেজন্য সঠিক বিচার চাই আমরা।'
এলাকায় অবৈধ পটকার কারখানা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। তবে পুলিশ বলছে বিস্ফোরণের পরপরই এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর সিপার আল বখতিয়ার বলেন, 'বারুদের কারণে আমাদের এলাকার শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সবাই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এলাকাটা হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে।'
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, 'আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে। যদি এর সাথে অন্য কেউ জড়িত থাকে সেক্ষেত্রে আমরা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। তাদের লাইসেন্স আছে কি না এবং থাকলেও কি পরিমাণ বারুদ তারা রাখছেন বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি।'
বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে বোম ডিসপোজাল ইউনিট। বাড়িটিতে পটকা ছাড়াও ভারী বিস্ফোরক তৈরি হতো কি-না জানা যাবে প্রতিবেদন জমার পর।