দেশে এখন
রেলের ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনা লাইনচ্যুতির কারণে
গরম এলেই জনমনে বাড়ে রেললাইন বেঁকে দুর্ঘটনা হওয়ার শঙ্কা। তাতে এ সময় সীমিত গতিতে চলার স্থায়ী আদেশও রয়েছে রেলের। রেলের তথ্য থেকে জানা যায়, ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে লাইনচ্যুতির কারণে। তবে তাপমাত্রা ছাড়াও রেল দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ রেললাইনের বেহাল অবস্থা আর অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুম্বকীয় হিট সেন্সর বসানো ও লোহার পাতের তাপমাত্রা কমাতে করা যেতে পারে সাদা রং।

গ্রীষ্মের দুপুরে প্রতিদিনই প্রাণিকূলকে দিতে হয় ধৈর্য ও সহ্য ক্ষমতার পরীক্ষা। অভিযোজন কৌশলে চলে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা।

তবে শুধু প্রাণীকূল নয় প্রকৃতির বৈরী পরিবেশে সক্ষমতার জানান দিতে হয় যন্ত্রপাতিকেও। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কৌশলে করতে হয় অবস্থানের পরিবর্তন। এই যেমন রেললাইন। অতিরিক্ত তাপে বেঁকে যায়।

রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঘটনা বহু পুরনো কিন্তু এটির থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষের কি নতুন কোনো পদক্ষেপ আছে?

পরিসংখ্যান বলছে, রেল দুর্ঘটনার ৭০ শতাংশই হয় লাইনচ্যুতির কারণে। প্রতি বছর যার সংখ্যা ৯০ থেকে ১১০টি।

গরমের সাথে রেললাইন বেঁকে যেতে সাহায্য করে কর্তৃপক্ষের অবহেলা। শুধু রাজধানীর রেললাইন ধরে হাঁটলেই চোখে পড়বে এর নাজুক অবস্থার। পর্যাপ্ত নেই ক্লিপ, হুক, নাট-বল্টুসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ।

রেললাইনের লোহার পাতকে ধরে রাখে স্লিপার। আর স্লিপারের শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করে দুইপাশের পাথর। অথচ অনেক জায়গায় দুই স্লিপারের মাঝখান দিয়ে আকাশ দেখা যায়।

রেলের একজন নিয়মিত যাত্রী বলেন, 'রেল লাইনটা যদি বাঁকা হয়ে যায়, তাহলে জনমনে একটা আতঙ্ক ও ঝুঁকি কাজ করে। রেল কর্তৃপক্ষ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা বাড়ালে যাত্রী হিসেবে আমরা ট্রেনের যাত্রাটা শুভ হিসেবে নিতে পারবো।'

গৌরিপুর-ভৈরব রেলপথ যেন সমতল রাস্তা। নেই পর্যাপ্ত পাথর। অকার্যকর হয়ে আছে সিগন্যালিং ব্যবস্থা। গরম ছাড়াও এ পথে ৫০ কিলোমিটারের বেশি গতি উঠানো সম্ভব হয় না। গ্রীষ্মে মিটারগেজ এ পথের ঝুঁকি বাড়ে আরও।

স্থানীয় একজন বলেন, 'আমাদের এখানে যে রেল লাইন, এটা অনেক পুরাতন হয়ে গেছে। এটা আধুনিক করার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এটা অনেক পুরাতন রেল লাইন, যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।'

তথ্য বলছে, সারাদেশের ৬০ শতাংশ রেলপথে রয়েছে ঝুঁকি। তাতে রেললাইন ও এক্সেল বক্সের তাপমাত্রা মেপে কিংবা গতি কমিয়ে চলে দুর্ঘটনা এড়ানোর চেষ্টা।

কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাষ্টার, মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'আমাদের চেকিং সবসময় চালু আছে। রেল লাইনের যে পাহারাদার আছে, তারা সবসময় কাজ করছে, দেখাশোনা করছে।'

রেল সচিব বলছেন, স্থায়ী আদেশ দেয়া আছে সবার জন্য। করা হচ্ছে পর্যবেক্ষণও।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, 'আমাদের লোকমাষ্টারদের একটা স্ট্যান্ডিং অর্ডার দেওয়া থাকে। তারা যখন গরম অনুভব করে, তারা তখন রেষ্ট্রিকটেড স্পিডে চলাচল করে। বিশেষ করে আমাদের পুরাতন লাইনে যেন নির্দিষ্ট গতিতে চালায় সে রেষ্ট্রিকশন আমাদের দেওয়া আছে।'

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনিটরিং সিস্টেমকে করতে হবে আধুনিক। চুম্বকীয় হিট সেন্সর বসানোর পাশাপাশি লোহার পাতের তাপমাত্রা কমাতে করা যেতে পারে সাদা রং।

বুয়েটে পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, 'আমরা কিছুটা যদি রেলের উপরে সাদা রঙ করে দিতে পারি, রেলের ভেতরের তাপমাত্রা কিন্তু ৫ থেকে ১০ ডিগ্রি কমে যাবে। রেলের গায়ে ম্যাগনেটিক কিছু হিট সেন্সর বসানোর সুযোগ আছে। এর মাধ্যমে দূরে বসে রেলের ভেতরের তাপমাত্রা কত তা দেখা যাবে।'

এছাড়া পুরাতন রেললাইন প্রতিস্থাপন আর সময়োপযোগী বিনিয়োগের পরামর্শ রেল বিশেষজ্ঞদের।

এমএসআরএস