এ যেন সবুজের বসতবাড়ি। তরতরিয়ে বেড়ে ওঠা কচিডগায় ছেয়ে গেছে আড়াআড়ি বাঁশের মাচা। এখানেই তরমুজের হলুদ ফুলকুঁড়ি সবুজ হয়ে ভারি হয়। মাচার গায়ে জড়ানো জালে গা-এলিয়ে বাড়তে থাকে গাছের পরিধি। তারই মাঝে ঘন সবুজের পাতার ফাঁকে লুকিয়ে ছোট-বড়-মাঝারিসহ বিভিন্ন আকারের গাঢ় সবুজ রঙের একেকটি তরমুজ।
শরতেও উষ্ণ বরেন্দ্রে দাপুটে সূর্য। তরমুজ উৎপাদনের মৌসুম না হলেও চাষ হওয়া এই জাতটির নাম ব্ল্যাকবেরি। অসময়েই পবা উপজেলার আলিমগঞ্জে গ্রীষ্মকালীন ভারতীয় এই জাতের তরমুজ চাষ করেছেন কামরুল হাসান।
প্রবাসী ভাই সাহানুর কবিরের অনুপ্রেরণায় আধুনিক কৃষিতে মনোযোগী হন তিনি। দুই ভাইয়ের বিনিয়োগে গড়ে তোলেন মৌসুমভিত্তিক দেশি-বিদেশি ফল-ফসলের ২৫ বিঘার আবাদ। এতে আধুনিক কৃষিপদ্ধতি অনুসরণ করেই হয় এসব ফসল। তার মধ্যে উন্নত জাতের তরমুজের আবাদ হয়েছে আশানুরূপ।
উঁচু জমি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে মালচিং পদ্ধতিতে করা হয়েছে এ আবাদ। উন্নত এ চারা রোপণের সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই পরিপক্ক হতে শুরু করেছে ফল। অসময়ের এ তরমুজের স্বাদ ও চাহিদা দুটোই বেশ ভালো। তাতে বিঘায় ২৫ হাজার টাকার বিপরীতে সপ্তাহে জমি থেকে ফল মিলছে প্রায় ৫ মণ। তাতে ৭০ টাকা কেজিতে মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রির আশা।
কৃষক কামরুল হাসান জনি জানান, বাজারে বেশ চাহিদা আছে। এটা বিক্রি করে আমাদের লাভটা আসে। উঁচু এবং ভালো জমি যদি থাকে সারা বছরই চাষ করা যায়। শুধু শীতকাল বাদে এই সময়ের জন্য অন্য প্রজাতির তরমুজ চাষ করতে হবে।
কৃষক কামরুল হাসান জনির জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষ। ছবি: এখন টিভি
তুলনামূলক লাভজনক হওয়ায় ভিন্ন মৌসুমে উৎপাদিত এই তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের। তাই ভূগর্ভস্থ পানি ও জলবায়ু পরিবর্তনের এ সময়ে কৃষি থেকে আর্থিক লাভের আশায় অগামীতে ধান ও ভুট্টার মতো ফসলের পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন এ তরমুজ চাষ করতে চান স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয় চাষীদের মধ্যে একজন জানান, যেহেতু এটা লাভজনক ফসল। এইজন্য আমরা ও তরমুজ করতে চাচ্ছি।
আগামী বছর এক বিঘা জমিতে আমি তরমুজ আবাদ করবো বলেও জানান আরো একজন কৃষক।
মৌসুমভেদে হরেক রকম সবজির চাষাবাদ হলেও রাজশাহীর পবা উপজেলায় তরমুজের চাষ হয় না বললেই চলে। তাই এ ধরনের লাভজনক ফসল উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
রাজশাহী পবা উপজেলা কৃষি অফিস উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'ম্যানেজমেন্ট কীভাবে করতে হবে। রোপণ কীভাবে করতে হবে। কখন সার দিতে হবে, কখন সেচ দিতে হবে। কখন আগাছা দমন করতে হবে, কীভাবে করতে হবে। এগুলো আমরা উপজেলায় তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।'
গেলো রবি মৌসুমে জেলায় তরমুজের আবাদ হয়েছিল ১০ দশমিক ১১ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয়েছিল ৩'শ ৩৩ টন তরমুজ। যা থেকে কৃষকের আয় হয় প্রায় ২৬ কোটি টাকা।